নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি : তনচংগ্যা ভাষার শব্দ “ফুকির মুরং বা ফইরা মুরং” অর্থাৎ ফকিরের কুয়া বা সাধু বাবার কুয়া বলা যেতে পারে। উচ্চারনের দিক থেকে একজনে এক নামে ডাকলেও প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য যেন ভর করেছে ফুকির মুরং ঝর্নায়। প্রকৃতি দেবী তার অপূর্ব রুপ, রস, গন্ধ সব কিছু দিয়ে সাজিয়েছে এই ঝর্নাকে। চোখ রাখলে চোখ ফেরাতে মন চাইবে না কারোও। পাহাড় হতে প্রবাহিত ঝিরি ঝিরি পানির শব্দ, পাখির কিচির মিচির শব্দ মূহুর্তে হারিয়ে যাবে যে কেউ অন্য জগতে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলেও মন একটু লিত হবে না কারোও।
রাংগামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড এর পাগলী উপর পাড়ায় এই ফুকির মুরং ঝর্না অবস্হিত। আশেপাশে ছোট বড় কয়েকটি ঝর্না আছে এই স্হানে। প্রতিটি ঝর্না হতে অবিরাম ধারায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কথিত আছে আজ হতে শত বছর আগে এই পাহাড়ে এক সাধক বা ফকির ধ্যান করতো, লোকজন পুজা দিতো, মানত করতো, ফকির ধ্যান করতো বলে স্হানীয়রা এর নাম দিয়েছে ফুকির মুরং বা ফকির কুয়া।
ঘাঘড়া – বড়ইছড়ি সড়কের বটতলি এলাকার পূর্ব পাশ ধরে ৪ কিমি পাহাড়ী পথ আর ছড়া পাড় হয়ে এই স্হানে পৌঁছানো যায়। পথেমধ্যে পাগলি মুখ পাড়া, পাগলি মধ্যম পাড়া গ্রাম পার হয়ে পাগলি উপর পাড়া এই ঝর্নার দেখা মিলবে। এই স্হানে যেতে যেতে আরোও পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন পাহাড় হতে বয়ে চলা ছড়ার পানির বহমান ধারা, আশেপাশে অনেকগুলো পাহাড়ী গাছ গাছালি, পাখির কিচির মিচির শব্দ এবং ছোট বড় অনেকগুলো পাথর। যেতে যেতে মাঝে মাঝে দেখতে পাবেন পাহাড়ী কয়েকটি ঘর আবার ছড়ার উপরে বসে এখানকার লোকজন তাদের প্রাত্যহিক স্নানের কাজ সম্পন্ন করছেন। এক কথায় প্রকৃতি তাঁর সব কিছু উজাড় করে দিয়েছে এই এই স্হানটিকে।
বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) এই স্হানে দর্শন করতে গিয়ে দেখা পাওয়া যায় কয়েকজন পর্যটকের। তাদের মধ্য একজন হলো কাপ্তাই থানার ওসি নাসির উদ্দীন। তিনি জানান, আমি এই ঝর্নার অপরুপ সৌন্দর্য দেখে অভিভূত, এখানে যে এতো একটা সুন্দর ঝর্না আছে তা আমার জানা ছিলো না। এই স্হান দেখতে আসা কাপ্তাই উপজেলা ক্রীড়া সংস্হার সাধারণ সম্পাদক বির্দশন বড়ুয়া, উপজেলা স্কাউটস এর সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হাসান বাবু, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া জানান, এক কথায় অসাধারণ এই স্হানটি, তারা জানান যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় তাহলে এটা হবে রাংগামাটি জেলার মধ্য অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্র। এখানে ঘুরতে আসা কাপ্তাই উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন, শিক্ষক মো: ইসমাইল এই প্রতিবেদককে জানান, কাপ্তাইয়ে মধ্যে এই রকম একটি দর্শনীয় স্হান আছে কেউ কল্পনা করতে পারবেন না।
এলাকার ৫ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য সুমন বিকাশ তনচংগ্যা, ৬ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য মায়ারাম তনচংগ্যা এবং এলাকার বাসিন্দা কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হ্রদয় তনচংগ্যার সাথে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের ঐ স্হানে। তারা জানান তাদের দাদুর আমল হতে এই ঝর্নার কথা তারা শুনে আসছেন, এখানে একজন ফকির থাকতো, মাঝে মাঝে নাকি লোকজন তার দেখা পেতো, সেই থেকে এর নামকরণ করা হয় ফুকির মুরং। তারা সকলে দাবি জানান, সরকার যদি রাস্তাঘাট তৈরী করে দেয়, তাহলে এখানে পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে।
বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) ঐ স্হান হতে ফিরতে পথে মধ্যে দেখা পায় এলাকার বয়:বৃদ্ধ নাত্তোমনি তনচংগ্যা এবং লুন্দমনি তনচংগ্যার সাথে, তারা জানান, শত বছর আগে এখানে তাদের পূর্ব পুরুষরা মাঝে মাঝে এক ফকিরকে দেখতো, তিনি পাহাড়ে বসে সাধনা করতো, লোকজন ঐ স্হানে পুজা দিতো, মানত করতো। একসময় এই পাহাড়টা অনেক বড় ছিল, পাহাড় হতে অবিরাম ধারায় পানি প্রবাহিত হতো, বর্তমানে পাহাড় ভেঙ্গে ছোট হয়ে গেছে, তবে সারাবছর পানি পড়ে এই ঝর্নায়।
৫ নং ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরন্জিত তনচংগ্যা জানান, যদি অবকাঠামোগত আরোও উন্নয়ন হয় তাহলে এখানে আরোও পর্যটক বাড়বে,এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরোও বেগবান হবে।
প্রকৃতির এই অপরুপ স্হানটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখানকার অধিবাসীরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে যাতে করে এখানকার আত্মসামাজিক উন্নয়ন ঘটে।।