অসীম রায় (অশ্বিনী) বান্দরবান:
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ব্যাপক হারে পান চাষ হচ্ছে। উপজেলার সদর ইউনিয়ন, চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন ও নয়াপাড়া ইউনিয়নে এবার পানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। আলীকদম উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে পান চাষের ব্লক ঘুরে দেখা যায় পানের বরজের নজরকারা দৃশ্য।
বান্দরবান ইমানুয়েল হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের পরামর্শক ডাঃ জ্যোতিময় মুরুং
বলেন- পুষ্টিগুনঃ পান পাতায় রয়েছে গ্যাস্ট্রো প্রটেকটিভ, অ্যান্টি-ফ্লটুলেন্ট এবং কার্মিনেটিভ এজেন্ট যার কারণে পান চাবানোর সময় মুখে স্যালাইভা তৈরি করে। যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পানে নিকোটিন এসিড রয়েছে ০.৬৩-০.৮৯ গ্রাম, ভিটামিন এ ১.৯-২.৯ এমজি, থায়ামিন ১০-৭০ মাইক্রোগ্রাম, রিবোফ্লোভিন ১.৯-৩০ মাইক্রোগ্রাম, আয়োডিন ৩.৪ মাইক্রোগ্রাম এবং শক্তি রয়েছে ৪৪ কিলোক্যালরি।
পান চাষ একটি দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক ফসল। অনেক কৃষক পান চাষ করে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ কর সংসার চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে রাসানিক সার অনেক কম ব্যবহার হয় ও জৈব সারের ব্যবহার অনেকটাই বেশি। চাষাবাদ পদ্ধতিতে পান চাষে প্রথমে কাটিং সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করতে হয়।
১ থেকে ২ মাসের মধ্যে ডাল থেকে সবুজ লতা বের হয়ে ছেয়ে যায় পান পাতার লতা। তারপর শুরু হয় চাষিদের পান সংগ্রহ। এক বিঘা জমিতে পান চাষ করে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলে জানান পান চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে, এ বছর উপজেলায় ৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে ব্যাপক হারে পান বরজ চাষ করেছে কৃষকরা। ১নং সদর ইউনিয়নে ৩১ হেক্টর, ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নে ৫ হেক্টর, ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নে ২ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। এখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হেক্টর।
৪টি ইউনিয়নে নতুন পুরাতনসহ মোট ২০০ জন কৃষক পান চাষ করেছেন বলে জানা যায়। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে পানের বরজ। উপজেলার প্রায় ইউনিয়নে রয়েছে উঁচু, উর্বর জমি যা পান চাষের অত্যন্ত উপযোগী। আমতলী জলন্ত মনি পাড়ার পান চাষি নুর মোহাম্মদ বলেন, নতুন বরজে বিঘা প্রতি প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়।
সুন্দরভাবে পরিচর্যা করলে নতুন বরজ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই পান তোলা সম্ভব। এবার পানের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে দামও বেশ ভালো। আগের চেয়ে পান চাষ বেশি হচ্ছে আবার পদ্ধতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তার সাফল্যের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমি ২৫ শতাংশ জমিতে পানের চাষ শুরু করি।
৭ বিঘা জমিতে পানের বরজ চাষ হচ্ছে আমার। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা এসে আমাদের পান চাষের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। রোগবলাই থেকে পান বরজ রক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। কলার ঝিরি এলাকায় পান চাষি মো. জাকের হোসেন বলেন, এবার পানের ভালো ফলন হয়েছে।
বাজারে দামও বেশ ভালো। তিনি আরও বলেন, পান বরজ চাষ করে আমি আগের তুলনায় অনেক ভালো আছি অর্থনৈতিকভাবে। বিগত সময়ে তামাক চাষ করে অনেক পরিশ্রম করেছি কিন্তু তেমন লাভ করতে পারিনি। এখন তামাক বাদ দিয়ে পান বরজ করেছি।
পান চাষ বুঝে শুনে চাষ করলে এবং সঠিক ভাবে পরিচর্চা করতে পারলে ১ বিঘা (৩৩ শতক) পানের বরজ থাকলে তার আর পেছনের দিকে ফিরে দেখতে হবে না। সংসার খরচসহ অনেক কিছু করা সম্ভব। উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা উজ্জল কুমার দে জানান, চৈক্ষ্যং দক্ষিণ ব্লকে এবার ৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে।
প্রতি বছর এ এলাকায় পানের চাষ বাড়ছে। আলীকদম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা বলেন, পান চাষিদেরকে আমরা সর্বদা বিভিন্ন ধরনের কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে আসছি। ৩ টি ইউনিয়নে পান চাষে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। সেখানকার প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। যদি সরকারিভাবে কোন প্রণোদনা দেওয়া হয় তাহলে কৃষকরা আরও পান চাষ করে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, এ অর্থবছরে পান চাষের উপর প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের প্রণোদনার জন্য সরকারের কাছে প্রকল্প পাঠানো হবে।