ফরিদপুরে পদ্মা নদী সংলগ্ন একটি জলাশয়ে এসে অবস্থান করতে থাকা সেই বিরল প্রজাতির কুমিরটি উদ্ধার হয়েছে। সোমবার দুপুরের দিকে সেটিকে পানিতে দেখতে পেয়ে গ্রামবাসী জাল দিয়ে সেটিকে আটক করে। পরে বনবিভাগে খবর দেয়। রিপোর্ট লেখার সময় সেটি পদ্মার ওই জলাশয়ে জাল দিয়ে আটক অবস্থায় রয়েছে। জানা গেছে, ফরিদপুরের সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নে ছালাম খাঁর ডাঙ্গি গ্রামে পদ্মা নদী সংলগ্ন ফালুর কুম নামে পরিচিত ওই জলাশয়ে গত পনের দিনেরও বেশি আগে এসে অবস্থান নেয় মিঠা পানির ওই কুমিরটি। ছালাম খাঁর ডাঙ্গি গ্রামের স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার কালাম খান বলেন, এত দিন গভীর পানিতে থাকার পর আজ কুমিরটি পশ্চিমের অল্প পানিতে এসে টানের দিকে উঠতে থাকে। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয়রা সেটি দেখতে পেয়ে অন্যদের খবর দেয়। এরপর সবাই মিলে চারদিকে বড় জাল দিয়ে ঘেরাও করে কুমিরটিকে আটক করা হয়। কালাম খান জানান, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তারা কুমিরটিকে সেখান হতে জাল দিয়ে বেঁধে ট্রলারে করে ফরিদপুরের দিকে নিয়ে আসার জন্য গোলডাঙ্গি হতে রওনা হয়েছেন। আপাতত সেটি ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামানের হেফাজতে রাখা হবে। সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার মোস্তফা সরোয়ার বলেন, কুমিরটি প্রায় সাত ফুট লম্বা এবং দেড় ফুট চওড়া। এটি একটি বড় কুমির। নদীতে গত কয়েক দিন পানি কমতে থাকায় সেটি ডাঙ্গার দিকে চলে এসেছিল। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান বলেন, তারা বিষয়টি এরইমধ্যে বনবিভাগকে জানিয়েছেন। তারা এলে তাদের কাছে কুমিরটি হস্তান্তর করা হবে। কুমিরটি নিরাপদে আটক করতে পারায় গ্রামবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে তিনি জানান। ফরিদপুর বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা সাঈদুর রহমান বলেন, কুমিরটিকে আটক করতে পারার খবর পেয়ে বন্য প্রাণী সম্প্রসারণ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা ফরিদপুরে আসছেন। তারা এলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কুমিরটির অবমুক্তির ব্যাপারে। জানা গেছে, গত ২২ জুলাই কুমিরটি স্থানীয়দের নজরে আসার পর প্রথমে ফরিদপুরের বনবিভাগ এবং পরে খুলনা থেকে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ১২ সদস্যের দল ফরিদপুরে এসে দুই দফায় সেটি উদ্ধারে অভিযান চালায়। কুমিরের আগমণের খবরে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের পাশাপাশি আতঙ্কও তৈরি হয়। কুমিরটিকে বিরক্ত না করতে এবং অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়। অনেকে সেটি দেখতে ছুটে যান দুর্গম চরে। জানা গেছে, বিরল প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় এই মিঠাপানির দুটি কুমির সাম্প্রতিককালে উদ্ধার করেছে বন্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। কিন্তু কোনো নারী কুমির নেই। বনবিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, কুমিরটি নারী প্রজাতির হলে সাফারি পার্কে থাকা পুরুষ প্রজাতির কুমিরের সাথে প্রজনন ঘটানোর। যাতে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রজাতির কুমিরের বংশবৃদ্ধি করানো যায়।