• শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সাঙ্গু নদীতে নৌকায় ডুবে নারী নিখোঁজ এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি মোল্লাহাটে বিএনপির আহবায়ককে অব্যাহতি দেয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়িতে এক ঘন্টার জন্য প্রতীকী পুলিশ সুপার হলেন শিশু শিক্ষার্থী নূর ইসরাত জাহান প্রবারণা পূর্ণিমাকে ঘিরে চলছে উৎসবের আমেজ লামায় ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে অসহায় জায়গার মালিকের যত অভিযোগ বান্দরবানে এবারো এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কোয়ান্টাম কসমো কলেজ প্রথম কাপ্তাই মা সীতা দেবী মন্দিরে হাতির আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্ত রান্না ঘর ও বাগান নবীনগর নিখোঁজ গৃহবধূর সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন! সাজেকে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি ও বাঙ্গালী পরিবারের মাঝে সেনাবাহিনীর আর্থিক সহায়তা প্রদান মানিকছড়িতে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম হাতে-কলমে অক্ষর শিখছে শিশুরা প্রবারণা উৎসবে মানিকছড়িতে অনুদান বিতরণ গুইমারা কলেজের সাফল্য মায়ের ইচ্ছে স্বপ্নপূরণে চিকিৎসক হতে চায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত আশরাফুল

লাউ চাষে তৃপ্তির হাসি খাগড়াছড়ির কৃষক সাহিদুলের

আল আমিন রনি, স্টাফ রিপোর্টার: / ৫২৩ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২২

খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার বড় পিলাক গ্রামের কৃষক সাহিদুল ইসলাম একজন অনুপ্রেরণার নাম। তিনি এ বছর প্রায় ১৬০ শতক জমিতে উন্নতজাতের ময়না লাউ চাষ করেছেন। চাষে ব্যবহার করেছেন গোবর ও অল্প পরিমাণে সার। বীজ রোপণের দেড় মাস পর থেকে গাছে গাছে ফুল আসে। এর কিছু দিন পর থেকে সাহিদুলের ক্ষেতে গাছে গাছে লাউ শোভা পায়।  

সাহিদুলের বয়স এখন প্রায় ৪০ বছর। পরিবারে রয়েছেন বাবা-মা, ভাই-বোনসহ ৭ জন সদস্য। তিনিই সংসারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। একসময় একা কাজ করে সংসার চালানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠছিল। অনেক ধার-দেনাও করতে হয়েছিল তার। এক পর্যায়ে তিনি নিজের উদ্যোম ও পরিশ্রমের ফলে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে নেমে পড়েন শাক-সবজি চাষাবাদে। এখন তিনি সফল একজন চাষি।

জানা যায়, সাহিদুল বছরের ১২ মাসেই কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকেন এখন। তবে সবজির মধ্যে তিনি লাউ উৎপাদন করেন সারাবছরই। লালশাক, আলু, বেগুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি সবজিও উৎপাদন করেন। তবে অধিক গুরুত্ব দেন লাউ চাষের প্রতি। কারণ, এ সবজি প্রায় সারাবছরই উৎপাদন করা যায়। এতে লাভও হয় অনেক বেশি।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে কৃষক সাহিদুল ইসলাম বলেন,
বিষমুক্ত চাষাবাদে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত লাউ বিক্রি থেকে পেয়েছেন প্রায় ২২ হাজার টাকা। বাকি সময়ে আরও ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা আসবে বলে ওই কৃষক আশাবাদী। শুরু থেকে এ পর্যন্ত লাউ চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা । এর আগে প্রতিবছর ধান চাষ করে কোনোরকমে তার সংসার চলত, এখন লাউ চাষ করে সংসার চালিয়ে অনেক সঞ্চয় হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, মানুষ পরিশ্রম করে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। আমি প্রথমে টমেটো ও লাউ চাষ করে করে লোকসানে পড়েছি। তখন আমি বুঝিনি, কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। মনোবল ধরে রেখে পরিশ্রম করে গেছি। চাকরি ছাড়াও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, সেটা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।

তার ক্ষেতে লাউয়ের বাম্পার ফলন দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়েছেন।
তারা বলেন, তারাও কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। সাহিদুল ইসলাম তাদের কাছে অনুপ্রেরণা স্বরূপ। এক সময় তিনি অভাবে দিন পার করতেন, এখন তার জমিতেই পরিচর্যার কাজ করেন অনেক শ্রমিক। কৃষি কাজে কোনো লজ্জা নেই। পরিশ্রম করে যদি সফলতা পাওয়া যায় তাতেই আনন্দ।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের ডাক্তার শহিদুল আলম কোরাইশী বলেন, লাউয়ের ৯৬ শতাংশই পানি। ফলে নিয়মিত লাউ খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। লাউ রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। লাউয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা হার্টের জন্য উপকারী। জন্ডিস ও কিডনির সমস্যায়ও খেতে পারেন লাউ। লাউয়ে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি ও প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী সবজি লাউ। এতে রয়েছে দ্রবণীয়, অদ্রবণীয় ফাইবার ও পানি। দ্রবণীয় ফাইবার খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে। লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।  লাউ পাতার তরকারি মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে, ঘুমে সমস্যার সমাধান করে ও দেহের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। ইউরিন ইনফেকশনে খুব উপকারী লাউ। তাই ব্যাপক পরিমাণে লাউ চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে।

এ ব‍্যাপারে গুইমারা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, কৃষি নির্ভরশীল আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। এখানে অসংখ্য বেকার যুবক রয়েছেন, তারা যদি চন্দন মিয়ার মতো এভাবে কৃষি কাজে মনোযোগী হতেন, তাহলে আমাদের দেশের লক্ষ যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো কৃষি কাজে। কৃষির দেশ কৃষকের দেশ আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ।

গুইমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, সাহিদুল ইসলাম একজন প্রগতিশীল কৃষক। সাহিদুলের মতো আরও উদ্যোমী কৃষক সবজি চাষে আগ্রহী হলে কৃষি বিভাগ তাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা করতে সবসময়ই প্রস্তুত। লাউ শীতের সবজি হলেও এখন সারা বছরই ফলে। এই সবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর। লাউ শরীরের জন্য বেশ উপকারী। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই লাউ চাষ করে কৃষক সহিদুল ইসলাম। এ কারণে ভালো লাগছে।

এম/এস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ