আব্দুল মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি কৃষি নির্ভর উপজেলা। চলতি মৌসুমে দেড় শতাধিক প্রান্তিক কৃষক ৭০ হেক্টর জমিতে পেঁপে সৃজন করে টানা বৃষ্টির ধকলে দুই কোটি টাকার পূঁজি খুঁইয়েছেন! বৃষ্টি পরবর্তী বাগান পরিচর্চায় ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন আশাহত কৃষক। বৃষ্টি পরবর্তী কৃষও অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপজেলায় ৭০ হেক্টর উঁচু-নিচু জমিতে রেড লেডি পেঁপে সৃজন করেন দেড়শতাধিক কৃষক। এর মধ্যে ৮৬ জনের ২৪ হেক্টর পেঁপে বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এতে তাঁরা পুঁজি খুৃঁইয়েছেন ২ কোটি টাকা! যদিও তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এখন ক্ষতিগ্রস্ত ও অন্যান্য কৃষকেরা বাগানের পেঁপে ঝড়ে পড়া রোধে নিয়মিত বাগান পরিচর্চায় পুঁজি তুলতে ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন।
সরজমিন ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি নির্ভর উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন শাক, সবজি ও ফলমূলের পাশাপাশি ৭০ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ করেছিলেন। রেড লেডি সৃজিত পেঁপে গাছে টানা তিন বছর ফল দিয়ে থাকেন। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা আশাহত না হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সরজমিনে ডাইনছড়ির উদ্যোক্তা মো. হানিফ ইকবাল জানান, আমি কৃষকের সন্তান। ছোট পরিসরে গরুর খামারের পাশাপাশি ধান, সবজি এবং এই প্রথম ৮০ শতক ২য় শ্রেণীর জমিতে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮০০ রেড লেডি পেঁপের চারা রোপন করেছি। ১০০/১৫০ গাছ মরে গেলেও বাগানে প্রচুর ফল আসার আগেই ১৫/২০ দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে খেত তলিয়ে যাওয়ায় শুরুতে হোঁচট খেতে হয়েছে! এখনও গাছ থেকে প্রতিনিয়ত পেঁপে ঝরে পড়ছে! ওষধ দিয়েও ঝরা পড়া ঠেকাতে পারছিনা! তারপরও ৩ লাখ টাকার পেঁপে ইতোমধ্যে বিক্রি করেছি। একটু উঁচু জায়গায় পেঁপে চাষ করলে ঝুঁকি থাকে না। প্রতি কেজি পাকা পেঁপে ৪০-৫০ টাকা এবং ঝরেপড়া পেঁপের কেজি ১০/১২ টাকায় বিক্রি করছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়ন ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সহায়তায় এই এলাকায় গড়ে উঠা কৃষি পণ্য সংগ্রহ কেন্দ্র বা কালেকশন পয়েন্টের সভাপতি ও প্রান্তিক কৃষক মো. ফোরকান আলী জানান,প্রান্তিক কৃষকের সৃজিত মৌসুমী শাক,সবজি, ফল-ফলাদি স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করার সুবির্ধাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় কালেকশন পয়েন্টে স্থাপন করেছে। ফলে এলাকার সকল কৃষক তাঁদের উৎপাদিত ফসল জমির পাশে কালেকশন পয়েন্টে ন্যায্যমূল্যে ও টোল ট্যাক্সের ঝামেলা ছাড়াই বিক্রি করার সুযোগে জনপদে কৃষি উৎপাদন বাড়ছে। টানা বৃষ্টিতে পেঁপে খেতে পানি জমে কৃষকের ক্ষতি হলেও পরবর্তী মৌসুমে সর্তক থাকলে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। হাইব্রিড বা রেড লেডি পেঁপে টানা তিনবার ফল দেওয়াতে সাময়িক ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে লাভবানের সুযোগ আছে।
ডাইনছড়ি স্কুল পাড়ার কৃষক মো. সাদেক মিয়া বলেন, ৪০ শতক নিচু জমিতে সৃজিত পেঁপে বাগানে বৃষ্টি ধকলে আমি দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। আর হয়তো ১৫/২০ হাজার টাকার বিক্রি করা যাবে। কৃষি অফিস ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিলেও আমি ১০ কেজি পরিমাণ খাদ্য সহায়তা পেয়েছি। পরবর্তী বছর সর্তকভাবে গাছ পরিচর্চা করে লাভবানের আশায় স্বপ্ন দেখছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলায় গ্রীষ্মকালীণ শাক,সবজি ও পেঁপে চাষ হয়েছে ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু পেঁপেই ৭০ হেক্টর। এসব ফসলের অর্ধেক নিচু জমিতে। ভারী বৃষ্টিতে নিচু জমির ২৪ হেক্টর পেঁপে খেতে ক্ষতি হয়েছে। আনুমানিক দুই কোটি টাকার পুঁজি খুঁইয়েছেন পেঁপে চাষিরা। অবশিষ্ট জমির ফসল রক্ষায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা সরজমিনে কৃষকদের ছত্রাকসহ প্রয়োজনীয় ওষধ প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের আগামীতে কৃষি প্রণোদনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বৃষ্টি পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।