আব্দুল মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)
পাহাড়ের মাটিতে লেবু জাতীয় ফল মিষ্টান্ন মাল্টা চাষে আশানুরূপ ফল হলেও বাজার দর কম হওয়ায় খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার মাল্টা চাষিরা হতাশ! এখানে চলতি মৌসুমে ৬০ হেক্টরে মাল্টা চাষ থাকলেও ফলন হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৭ মে.টন। বর্তমানে বাজারমূল্য ১৬০০ টাকা মণ। এতে প্রান্তিক চাষি হতাশ!
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছর পর্যন্ত উপজেলার অর্ধশত প্রান্তিক চাষি মোট ৬০ হেক্টর জমিতে লেবু জাতীয় এই মিষ্টান্ন মাল্টা-বারি-১ সৃজন করেছে। এর মধ্যে এই মৌসুমে ফল ধরেছে ১৫ হেক্টর বাগানে। এতে কৃষিবিদেরা উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা স্থির করেছে ১১২.৫০ মেট্রিক টন। সম্প্রতি কুমারী, বড়টিলা কাটাবন, তিনটহরী ও বড়ইতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালু ও সমতলে লেবু জাতীয় বারি-১ মাল্টা গাছের সবুজ পাতার আড়াঁলে থোকায় থোকায় মাল্টার বাহার। এ সময় কথা হয় কুমারী বড়টিলার লনি মিয়ার সাথে। তিনি জানান,৮০ শতক টিলায় সৃজিত বারি-১ মাল্টার ২০০ গাছে এবার প্রচুর মাল্টা ধরেছে। যদিও এখনও ফল হৃষ্টপুষ্ট হয়নি। তারপরও আগে-বাগে বাজার দর ভালো হওয়ার আশায় গত মঙ্গলবার উপজেলার বড় ও পাইকারী বাজার তিনটহরী নিয়ে ছিলাম। মণ ১৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এত কম দামে ফল বিক্রি করলে আশা নিরাশায় রুপ নিবে! দর বৃদ্ধি না পেলে কষ্ট স্বার্থক হবে না। মণ ২০০০ টাকা বিক্রি করলে লাভবান হওয়া সম্ভব।
বড়ইতলীর আরেক সফল চাষি মো. আবুল কালাম জানান, পাহাড়ের মাটির গুনাগুনে ফল খুব মিষ্টান্ন হয়। কিন্তু এখানকার ভোক্তারা(ক্রেতা) সবুজ মাল্টায় আকৃষ্ট না হয়ে বাজারের হলদে মাল্টা ৩২০ টাকা কেজি কিনে খেতে লাইন ধরে! অথচ বাজারের এসব মাল্টায় ক্ষতিকর ওষধ মিশানো। তিনি আরও বলেন, এ যেন ‘দুধ বেচে মদ খাওয়ার অবস্থা’!
পূর্ব তিনটহরীর মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, মাল্টা গাছে এবার ভাল ফলন হয়েছে। তবে শুরুতে যে, বাজারমূল্য এতে ভয় লাগছে। দাম বৃদ্ধি না হলে লাভও কম হবে।
তিনটহরী, কুমারী ও বড়ডলু কৃষি ব্লকের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, পাহাড়ের টিলার মাটি লেবু জাতীয় ফল চাষ উপযোগি। এখানকার বারি-১ মাল্টা খুব মিষ্টান্ন ও রসালো। দিন দিন মাল্টা চাষ বাড়লেও বাজার দর কেন যেন বাড়ছে না? মূলত স্থানীয়েরা সবুজ মাল্টা কিনতে চায় না। তারা সমতলের হলুদ কালারের মাল্টায় ঝুঁক!
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, পাহাড়ে যেহেতু লেবু জাতীয় ফল -ফলাদি চাষাবাদ ও ফলন ভালো হয়। সুতরাং এখানকার মাল্টা স্বাদে গুণে অতুলনীয়। আমরা লেবু জাতীয় এসব ফল চাষে সব সময় প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনাসহ চাষাবাদে পরামর্শ দিয়ে থাকি। স্থানীয়েরা সবুজ ও নির্ভেজাল মাল্টা খাওয়ায় ঝুঁকলে চাষিরা লাভবান হয়ে চাষে আরও আগ্রহী হবে।