সবুজে ঘেরা পাহাড়ী জনপদ খাগড়াছড়ির ২৫তম পুলিশ সুপার হিসেবে দীর্ঘ ২ বছর ৮ মাস সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও জনবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে জনগণকে সেবা করে গেছেন মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৪ তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়িতে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পাহাড়ী এ জনপদে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নেমে আসে করোনা মহামারী। করোনা মহামারীর মধ্যে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে পুলিশের খাগড়াছড়ি ইউনিটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন চৌকস এ কর্মকর্তা। লক-ডাউন চলাকালে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ সরকারী বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণসহ জনসচেতনতা তৈরীর ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একই সময়ে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি-পুনাক খাগড়াছড়ির সভানেত্রী ও খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপারের সহধর্মিনী আমিনা আফরোজ জেমীর উদ্যোগে কর্মহীনদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরনের মতো মানবিক কাজে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন নিরলসভাবে।
খাগড়াছড়ির নয়টি থানা, এটি তদন্ত কেন্দ্র, ছয়টি পুলিশ ফাড়িঁ ও এগারোটি ক্যাম্পের মাধ্যমে তৃনমুল জনগণের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছছে চৌকস পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। দূর্গম ভৌগলিক অবস্থানের মধ্যেও পুলিশী কার্যক্রমকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। একাধিক ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেপ্তার ও আদালতে সোপর্দ সহ অন্যান্য আইনী কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করে খাগড়াছড়িবাসীর আস্থা অর্জন করেছেন মোহাম্মদ আবদুল আজিজ।
খাগড়াছড়ি সদরের বলপোয়া আদাম এলাকায় ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ দেশব্যাপী আলোচিত হলেও ছিল ক্লু-লেস একটি ঘটনা। পুলিশ সুপারের চৌকস নেতৃত্ব ও দক্ষতায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে আসামীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করে বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়। এ ছাড়া জেলা সদরের বিজিতলা এলাকায় বৌদ্ধ ভিক্ষু খুন, মাটিরাঙ্গার চাঞ্চল্যকর পল্লী চিকিৎসক টিপু খুন, ক্লু-লেস আবুল বাশার হত্যাকান্ড, ধর্ষণের পর বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে গৃহিনী জরিনা বেগম খুন, ক্লু-লেস সবিতা ত্রিপুরা হত্যাকাণ্ড, দীঘিনালার মস্তক বিহীন চায়ের দোকানী খুনসহ একাধিক চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস মামলার দ্রুততম সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়।
ক্লু-লেস ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, অস্ত্র উদ্ধার, মাদক মামলার কার্যক্রমে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি শহরের টমটম অটোরিক্সায় একটি তরুণীকে নীপিড়নের এক ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কোন ধরণের অভিযোগ ছাড়াই অটোরিক্সা চালককে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরবর্তীতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় এবং ভিকটিম তরুণী মানবিক বিবেচনায় কোন অভিযোগ না করায় তাকে অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। এমন তৎপরতায় ভিকটিম তরুণী ও নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসেন খাগড়াছড়ির মানবিক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ।
খাগড়াছড়িতে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন কালে খাগড়াছড়ির তিনটি পৌরসভা (খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রামগড়), ৩৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করেন। পুলিশের ভূমিকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এসব নির্বাচন ছিল স্বত:স্ফূর্ত ও অংশগ্রহণমূলক।
সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় খাগড়াছড়ির চোরাকার্বারী নির্মূলে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। চোরাচালান প্রতিরোধ ও মালামাল উদ্ধার অভিযানের সফলতার পুরস্কার হিসেবে পুলিশ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন প্রথম স্থান অর্জনকারী পুলিশ সুপারের সম্মাননা।
এছাড়াও মোহাম্মদ আবদুল আজিজ খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ ও সাবেক মহাপরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারী। একজন পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালে দুই মহাপরিদর্শককে পাওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের।
এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের টিআরসি (ট্রেইনিং রিক্রুট কনস্টেবল) নিয়োগের অফিসিয়াল টিভিসি বা ট্রেইলার নির্মিত হয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ লাইন্সে। বাংলাদেশ পুলিশ মিডিয়া উইংয়ের বৃহৎ এই কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। সারাদেশে ভিডিওটি প্রসংশিত হয়। তাঁর মেয়াদকালে ২০২১ ও ২০২২ সালে টিআরসি নিয়োগ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। দুর্নীতি ও প্রভাবমুক্ত নিয়োগের মাধ্যমে খাগড়াছড়িবাসীর কাছে সমাদৃত হন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ।
এ সব কাজের পাশাপাশি খাগড়াছড়িতে আগত হাজার হাজার পর্যটকদের নিরাপত্তা, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন এবং বিল বোর্ড স্থাপন করেন। পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার আবদুল আজিজের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
খাগড়াছড়িতে দায়িত্ব পালন কালে বৃক্ষরোপণ, মৎস্য অবমুক্ত করণ, পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-তে আত্ম উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সাথে মতবিনিময়সহ অসংখ্য ইতিবাচক কাজ করে জেলা বাসীর আস্থা ও জনবান্ধব পুলিশিং এবং মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে তুলে ধরেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। শুধুমাত্র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজের কর্মকাণ্ড নয়, তাঁর সহধর্মিনী পুনাক সভানেত্রী আমিনা আফরোজ জেমীর মানবিক কর্মকাণ্ড ছিল সবমহলে প্রশংসনীয়।
গেল ৩ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে পাহাড়ের জনবান্ধব পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজের খাগড়াছড়ি জেলা হতে পুলিশ সদর দপ্তর ঢাকায় বদলীর খবরে মর্মাহত হয়েছেন জেলাবাসী। এমন কর্মমুখর, জনবান্ধব, চৌকস কর্মকর্তার পেশাগত উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছেন খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের নানা পদস্থ সদস্যবৃন্দ ও জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এম/এস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত