পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় দিন দিন আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। বাড়ছে খুন অপহরণসহ নানা ঘটনা। জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতিপক্ষের দা’র কোপে মারাত্মক আহত হয়ে শুক্রবার (৫ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নুরুল আলম নামের এক ব্যক্তি।
নিহত নুরুল আলম উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের শুকরিয়া পাড়া গ্রামের মৃত গুরা মিয়ার পুত্র। মহেশখালী প্রতিনিধি বদরুন্নেসা হ্যাপী করিমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহত নুরুল আলমের ভাগিনা সাইদুজ্জামান বাদশা। এ বিষয়ে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রনব চৌধুরী বলেন, শুনেছি আহত ব্যক্তির চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
অপরদিকে, বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড, দেবাঙ্গ পাড়ায় এক কলেজ ছাত্রীকে অপরণের অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর অসহায় পিতা। অপহরণ হওয়া কলেজ ছাত্রী ফাইরুছ তাবাসসুম নিকাত(১৬), পিতা- ফরিদ মিয়ার মেয়েকে একই এলাকার ফজলুল করিমের ছেলে শাহাব উদ্দিন অপহরণ করেছে বলে জানান মেয়েটির বাবা। অপহৃত মেয়েটির পরিবার ও স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় কলেজে যাওয়ার সময় ৪ আগস্ট ২০২২ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে বাড়ি থেকে বের থেকে বের হওয়া মাত্রই কয়েকজন বখাটে মেয়েটিকে অপহরণ করে। এ বিষয়ে মেয়েটির পিতা ফরিদ মিয়া বাদী হয়ে শাহাবুদ্দিনসহ ৩ জনের নামে মহেশখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে মেয়েটির বাবা ফরিদ মিয়া সাংবাদিক হ্যাপী করিমকে জানান, আমার মেয়েকে দ্রুত উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।আমার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে এই বখাটদের হাত থেকে ফেরত চাই এবং অপহরণকারী শাহাব উদ্দিনসহ সকলের শাস্তি কামনা করছি। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত শাহাব উদ্দিনের সাথে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় প্রতিবেদক। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এছাড়াও ১০দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ারঘোনা মাঝেরপাড়া হেফজ বিভাগের ছাত্র মোঃ সোহেল। ছেলেটির এখনো সন্ধান মিলেনি। মোঃ সোহেল (১১) হোয়ানক রাজুয়ারঘোনা এলাকার বাসিন্দা কবির হোসনের সন্তান। নিখোঁজ মোঃ সোহেলের পিতা-কবির হোসেন সাংবাদিক হ্যাপী করিমকে জানান, গত ২৩ জুলাই সকাল ৭ টার দিকে মোঃ সোহেল হেফজখানায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার পরে ও বাড়ীতে ফিরে আসেনি তখন আমি ও আমার আত্মীয় স্বজনেরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুজি করার পরে ও পাইনি। শেষ পযর্ন্ত আমি নিরুপায় হয়ে মহেশখালী থানায় হারানো ডায়রি (জিডি) করেছি। জিডি নং-৪১, ০১/০৮/২০২২ইং। অন্যদিকে, মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে জমির ভূয়াঁ দাখিলা উত্তোলন করে জায়গার প্রকৃত মালিকদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভোক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৬নং ওয়ার্ডের নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুক্তার আহমদের পুত্র শামসুল আলম কর্তৃক কালারমারছড়া ইউনিয়নস্হ ভূমি অফিসের তহসিলদার মিছবাহ উদ্দিন কে মিথ্যা তথ্যদিয়ে (তথ্য গোপন) করে দাখিলা উত্তোলন করে। জমির প্রকৃত মালিক ছৈয়দ আহমদের ওয়ারিশেরা ১৪২৬ বাংলা, ১৪২৭ বাংলা ও ১৪২৮ বাংলা সহ যুগযুগ ধরে সন সন দাখিলা কেটেঁ আসছে এবং দিল জাহারা বেগমের ওয়ারিশেরা ও যুগযুগ ধরে দাখিলা কেটে আসছে কিন্তু হঠাৎ শামসুল আলম সেনা বাহিনীর সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে কালারমারছড়া ভূমি অফিসের তহশিলদার মিছবাহ উদ্দিন কে মিথ্যা তথ্যদিয়ে ২৫/০৭/২০২২ ইং তারিখ ৪৩৭ নং খতিয়ান ও ৮৪৭ নং দাগের জায়গা থেকে ছৈয়দ আহমদের ওয়ারিশদের প্রাপ্ত জায়গার ৩৬ শতক ও দিল জাহারা বেগমের ওয়ারিশদের প্রাপ্ত ১২ শতক জায়গার ১৪২৯ বাংলার দাখিলা ভূয়াঁ তথ্যের ভিত্তিতে কেটে নিয়েছে শামসুল আলম। এমতাবস্থায় ছৈয়দ আহমদ ও দিল জাহারা বেগমের ওয়ারিশগন প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেছেন এবং অত্যাচার, নির্যাতনকারী ও ভূয়া দাখিলা কেটে নেওয়া শামসুল আলম গংয়ের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে হয়রানির স্বীকার হওয়া ভুক্তভোগীরা।
এছাড়াও, কুতুবজোম ইউনিয়নস্হ ৩নং ওয়ার্ড তাজিয়াকাটাঁয় স্বামী কবির আহমদ প্রকাশ কবির কর্তৃক স্ত্রী শাহিনুর আক্তারকে জোরপূর্বক তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে স্বামী কবির আহমদ প্রকাশ কবির ও কুতুবজোম ইউনিয়নের দায়িত্বরত নিকাহ্ রেজিস্টার (কাজ্বী) জয়নাল আবেদীনকে আসামী করে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াছিন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। সব মিলিয়ে মহেশখালীর আইন শৃঙ্খলা পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় অবনতি ঘটেছে বলে জানান- মহেশখালী উপজেলার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সালেহ আহমদ। তিনি জানান, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে। অপরের স্বাধীনতা ও মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও ছোটদের প্রতি স্নেহের পরিবেশ তৈরির প্রতিও জোর দেন মহেশখালীর এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, মহেশখালীর আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় মহেশখালী থানা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে মহেশখালী থানা বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতা উপরও গুরুত্বারোপ করেন মহেশখালীর ওসি প্রণব চৌধুরী।
এম/এস