গত একমাসের অধিক সময় ধরে আলীকদম-লামা-চকরিয়া সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে অবৈধভাবে মায়ানমার থেকে আসা বিদেশী জাতের ব্রাহামা গরু। মায়ানমারের সীমান্তবর্তী আলীকদম উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে এইসব প্রচুর বিদেশি গরু আসছে দেশে। এই সড়কের কয়েকটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন বিভাগের চেকপোস্ট থাকার পরেও নির্বিঘেœ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে এইসব গরু। স্থানীয়রা বলছেন, অবৈধ গরুর বিষয়ে লোকাল প্রশাসনকে জানিয়েও তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা। সবাই কেমন জানি ম্যানেজ ! এতে করে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব ও লোকশানের মুখে পড়েছে দেশীয় গরুর খামারীরা।
গত কিছুদিন ধরে গরু চোরাচালান নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হলে অভিযানে নামে আলীকদম প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গত ১৮ মে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে পাচারে প্রস্তুতি নেয়া ২৫টি ব্রাহামা জাতের গরু, গরু বোঝাই ২টি ট্রাক ও একজনকে করে। গরুর সঠিক কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় আলীকদম উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা করে। গরু গুলো এখন আলীকদম থানা হেফাজতে রয়েছে। এদিকে আলীকদম ৫৭ বিজিবির একটি টিম মঙ্গলবার (২৩ মে ২০২২ইং) গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়ক এলাকা থেকে ৪০টি গরু জব্দ করে। পরে তা নিলাম দেয়া হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে এখন আলীকদমের জঙ্গলে প্রচুর অতিথি গরু রয়েছে। খামারীদের হদিস নেই। গরু গুলো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে মায়ানমার থেকে আনা হয়েছে। অবৈধ গরু অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানে আলীকদমের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা জড়িত।
জানা যায়, গতকাল ০৬ জুন সোমবার আলীকদম বাজারের সাপ্তাহিক হাটবার ছিল। হাটবারে গরুর বাজারে দেশীয় গরুর পাশাপাশি শতাধিক মায়ানমার থেকে আসা অবৈধ গরু বিক্রির জন্য তোলা হয়। বিষয়টি আলীকদম উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে ইউএনও আলীকদম গরুর হাট ঘুরে গেলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এসময় সাংবাদিকরা গরুর ছবি তুলতে গেলে ইউএনও বলেন, “গরুর ছবি তুলতে অনুমতি লাগবে”। প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তির এমন আচরণে উৎসাহী হয়ে কিছুক্ষণ পরে গরু চোরাচালান কারবারী ও ব্যবসায়ীরা গরুর হাটের ছবি তুলতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা চালায়, তাদের মারধর করে ও মোবাইল কেড়ে নেয়। এই বিষয়ে মোঃ ফরিদ উদ্দিন নামে এক সাংবাদিক আলীকদম থানায় অভিযোগ করেন। আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সরকার বলেন, সাংবাদিক ফরিদ উদ্দিনের অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসময় আলীকদম বাজারে বিদেশী অবৈধ গরুর বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আলীকদমের বাহিরে আছি, আমি কিছু জানিনা।
এদিকে সন্ধ্যা নামলেই আলীকদমের হাটে বিক্রিত মায়ানমারের গরু গুলো ট্রাকে ট্রাকে আলীকদম-লামা-চকরিয়া সড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার শুরু হয়। লামা-আলীকদম সড়কের আশপাশের লোকজনের ভাষ্যমতে ০৬ জুন সোমবার দিবাগত রাতে কমপক্ষে ১৫টি গরুর গাড়ি আলীকদম থেকে চলে গেছে। সোমবার দিবাগত রাত ৭টায় সড়কের লামা পৌরসভার লাইনঝিরিস্থ পৌর চেকপোস্টে একটি গরুর গাড়ি স্থানীয়রা আটক করে লামা উপজেলা প্রশাসন ও থানাকে খবর দেয়। দুইঘন্টা পরে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাণী সম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা ও লামা থানার প্রতিনিধি পাঠানো হয়। লামা প্রাণী সম্পদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা উশেথোয়াই মার্মা বলেন, গরু গুলো দেশীয় না। তবে ক্রস নাকি বিদেশী নিশ্চিত নয়। এছাড়া গরুর মালিক দাবী করা ব্যবসায়ীরা গরুর সঠিক মালিকানা ও কোন ব্যক্তি থেকে ক্রয় করেছে তার সঠিক কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। এসময় প্রশাসনের উপস্থিতিতে তাদের সম্মূখ দিয়ে অনুমতি না নিয়ে গরু চোরাকারবারীরা ট্রাক নিয়ে চলে গেলেও প্রশাসন কোন ভ‚মিকা গ্রহণ করেনি। প্রশাসনের এমন ভ‚মিকায় স্থানীয়রা হতবাক হয়ে যান। লাইনঝিরির পরে চকরিয়া পর্যন্ত আরো কয়েকটি চেকপোস্ট থাকলেও গরু গুলো কেন আটক করা হলো না তার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কেউ।
লামা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রুপন চন্দ্র মোহন বলেন, লাইনঝিরিতে আটক গরু গুলো দেশী না বিদেশী আমরা জানিনা। ঘটনাস্থলে আমার প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে।
আলীকদম বাজারে প্রকাশ্যে মায়ানমারের গরু বিক্রির বিষয়ে জানতে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেরুবা ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, লাইনঝিরি মোড়ে স্থানীয় লোকজনের আটক করা গরুর বিষয়ে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও লামা থানা পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঊনারা জেনে ব্যবস্থা নিবেন। লামা-চকরিয়া সড়কে অবৈধভাবে গরু পাচারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, অবৈধ গরুর বিষয়ে আলীকদম ও লামা উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আলীকদম ইউএনও কর্তৃক পশুর হাটে সাংবাদিককে গরুর ছবি তুলতে নিষেধ করার বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এম/এস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত