খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি ইউনিয়নের পাহাড়ী দূর্গম মাকুমতৈছা এলাকায় গোমতি - ঘিলাছড়া খালের ওপর একটি সেতু বদলে দিতে পারে ১৬ গ্রামের প্রয় ১০ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যাবস্থা।
সলিং আর কাঁচা সড়ক ধরে গোকুলমনি পাড়া বিজিবি ক্যাম্প ছাড়াও ১৬টি গ্রামে প্রায় দশ হাজার পাহাড়ি পরিবারের বাস। ১৬ গ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জনগনের কষ্ট হয়ে দাড়িয়েছে 'ঘিলাছড়া-গোমতিছড়া’। দীর্ঘ বছরের দাবীর পরে এ দুই পাহাড়ী ছড়ার উপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ হচ্ছেনা।
সেতু না থাকায় দীর্ঘ নয় কিলোমিটার এ সড়কে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। দুর্গম পাহাড়ি জনপদে ভোগান্তির অন্য নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়া। শুধু জনভোগান্তিই নয় সেতু না থাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে রয়েছে ১৬ পাহাড়ি গ্রাম। ফলে সেখানে গড়ে উঠেছে পাহাড়ের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের অভয়ারণ্য। তাদের অব্যাহত চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঘিলাছড়ির পাহাড়ী ছড়ার দু’পাশে রয়েছে কাঁচা রাস্তা আর দু পাশে হেলে দুলে দাড়িয়ে আছে দুটি পাকা পিলার, এ বিষয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলে কেউই কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কখন এ ছড়ার উপর সেতু নির্মান হয়েছে বা কোন সংস্থা করেছে, তবে সেতু নির্মানের এক বর্ষা যেতে না যেতেই সেতুটি ধ্বসে পরে এর পর আর এ ছড়ার উপর কোন সেতু নির্মান করা হয়নি। দীর্ঘ বছরেও ঘিলাছড়া খালের উপর সেতু না হওয়ায় এলাকাবাসি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন পাঁচ বছর পরপর সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে ভোট নিয়ে হাওয়া হয়ে যায় জনপ্রতিনিধিরা। সুখী রঞ্জন ত্রিপুরার মতে সেতু নির্মাণের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, এলাকাবাসি এ ছড়ার উপর কখনো সেতু দেখবে কিনা তা সন্দেহ।
দীর্ঘ সড়কের ঘিলাছড়া ও গোমতি খালের উপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় পায়ে হেঁটে ছড়া পার হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষক এবং এলাকার বাসিন্দারা। আদা, হলুদ, কলাসহ তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে সমস্যা হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে ভাঙ্গা মোড়া -২পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন এিপুরা বলেন, সকালে সূর্য ওঠার আগে রওনা দিলেও পায়ে হেঁটে গোমতি বাজারে পৌঁছতে বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়। একইভাবে নিজেদের অব্যাহত কষ্টের কথা জানালেন গোকুলমনি পাড়ার বাসিন্দা পরিমোহন ত্রিপুরা । বর্ষা মৌসুমে গোমতি খালে পানি বাড়ার কারণে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
গোমতি বি.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল হুদা জানান, বেয়াদতপাড়া, প্রার্থনা কারবারী পাড়া, নতুনপাড়া, কেশবমহাজনপাড়া, গোকুলমনিপাড়া, খাদাপাড়া, ভাঙামুড়া, কাপতলা পাড়াসহ ১৬টি পাহাড়ি পাড়া থেকে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিনই দীর্ঘ পাহাড়ী পথ পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে ছড়ার পানি বেড়ে যায়। ফলে এ সময় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারে না।
গোমতির বান্ধরছড়া মৌজার মৌজা প্রধান নিপুন কান্তি রোয়াজা এলাকাবাসীর কষ্টের কথা বলতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন আমাদের কষ্ট আছে কিন্তু কষ্ট দেখার কেউ নেই। একটি সেতুর অভাবে এখানে বসবাসকারীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জনদুর্ভোগ নিরসনে গোমতি খাল ও ঘিলাছড়ার ওপর সেতু নির্মানেরও দাবী জানান তিনি।
গোমতির ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিলন ত্রিপুরা বলেন, ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার ওপর দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মিত না হওয়ায় ১৬টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। কেউ অসুস্থ হলে কোনভাবেই দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পেরিয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তার মতে ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়া‘র ওপর সেতু নির্মিত না হওয়ায় এখনকার নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে।
সাধারন মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘিলাছড়া ও মাকুমতৈছা এলাকার গোমতিছড়ার ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তফাজ্জল হোসেন বলেন, সেতুর অভাবে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি এ জনপদে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। সেতুটি নির্মাণ করা হলে গোমতির সাথে দুর্গম ১৬ পাহাড়ি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। মানুষের নিত্যদিনের দুর্ভোগ কমে আসবে। সেতু না থাকায় পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত জানিয়ে মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জননিরাপত্তাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টি বিবেচনা করে ঘিলাছড়া ও গোমতিছড়ার উপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এদিকে মাটিরাংগা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ শামছুল হক বলেন খুব শীগ্রই স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সহযোগীতা নিয়ে ঘিলাছড়া ও গোমতি ছড়ার উপর সেতু নির্মানের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহন করা হবে।
এম/এস
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত