মহালছড়ি সংবাদদাতা
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়িতে চায়না আক্তার নামের এক নারীর নগদ অর্থ ও জমি আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে আপন বড়বোন ও ভাইৈর বিরুদ্ধে। চায়না আক্তার উপজেলার মহালছড়ি গ্রামের মৃত সরাফুল ইসলামের মেয়ে।
লিখিত অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, অভিযোগকারী চায়না আক্তার ১৯৯৮সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রথম মহালছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১,২ ও নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউি সদস্য নির্বাচিত হয়ে ৫ বছর এলাকায় জনপ্রতিনিধিত্ব করেন। সেসময় তিনি উপজেলার কাটিংটিলা এলাকার জনৈক মিঠু মেম্বারের কাছ থেকে তেষট্টি (০.৬৩) শতক ও লেবুছড়ি আবুল লিডারের কাছ থেকে পঁচিশ (০.২৫) শতক টিলাভূমি ক্রয় করেন। এর একবছর পর চায়না আক্তার খাগড়াছড়ি সদরের শালবন এলাকার বাসিন্দা ও তার আপন বড় বোন শাহীন আক্তারের কাছ থেকে ষোল (০.১৬) শতক জমি ক্রয় করেন। ২০০২ সালে তিনি বিবাহের সূত্রে শশুরবাড়ি চলে যাওয়ার আগে সকল জমির কাগজপত্র ও দলিলাদি তার বোন শাহীন আক্তারের কাছে আমানত হিসেবে রেখে যান। শশুরবাড়িতে থাকা অবস্থায় চায়না আক্তার এনজিও সংস্থা ব্র্যাক এর প্রকল্প কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন, চাকরিকালীন সময়ে তিনি নগদ তিন লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেন। পরবর্তীতে সঞ্চিত টাকা দিয়ে তিনি জেলা সদরের শালবনে ক্রয়কৃত জমিতে বসতবাড়ি করার পরিকল্পনা করেন এবং বড় বোনকে জানান। তখন তার বড় বোন শাহীন আক্তার বাড়ি তৈরীতে তাকে পূর্ন সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে তার সঞ্চিত অর্থের থেকে ২মাসের জন্য ৩ লক্ষ ধার নেন।
এদিকে এ ঘটনার ৪মাস পর চায়না আক্তার শালবনে তার জমিতে বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করেন এবং বড় বোন শাহীনা আক্তারের কাছে পাওনা টাকা দাবী করেন। এসময় তার বড় বোন চায়নার কাছ থেকে কোন টাকা নেননি বলে জানান। এছাড়া তার কাছে থাকা চায়নার জমির দলিলাদিও আত্নসাতের প্রচেষ্টা চালান। এঘটনায় সুকৌশলে শাহীনা নিজের সুবিধার্থে ছোট ভাই মতিউর রহমান ও ছোট বোন শামীমা আক্তারকেও এতে শামীল করেন।
অভিযোগে জানা যায়, অভিযুক্ত বড় বোন শামীমা আক্তার মহালছড়ি উপজেলা আনসার ও ভিডিও কার্যালয়ের প্রশিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব প্রতারনা করে যাচ্ছেন। তার প্রতারণা ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করার শাহীনা আক্তার তার বৃদ্ধ মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। মা ও ভাইয়ের স্ত্রীকে মারধরের ঘটনায় মহালছড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, লেবুছড়ি এলাকার আবুল লিডারের কাছ থেকে চায়না আক্তারের ক্রয়কৃত জমি মিথ্যার আশ্রয় ও আবুল লিডারের অসুস্থতার সুযোগে তার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে নেয় অভিযুক্ত শাহীনা আক্তার। সেসময় চায়না আক্তার ঘটনা জানতে পেরে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আদালত তাকে পুনরায় আবুল লিডারের কাছ থেকে দলিল করে নেবার পরামর্শ দেন। আদালতের পরামর্শে আবুল লিডার চায়নাকে পুনরায় একটি দলিল করে দেন এবং শাহীনার করা দলিল বাতিল বলে লিখিত ঘোষনা দেন। এরপর শাহীনা আক্তার তার ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে চায়না আক্তার ও তার ছোট ভাই আরিফুলের উপর হামলা চালায় এবং প্রাননাশের হুমকি দেয়। এবিষয়ে চায়না আক্তার মহালছড়ি থানায় আরো একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এদিকে বড় বোন শাহীনা, ছোটবোন শামীমা ও ছোট ভাই মতিউরের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে চায়না আক্তার তার আরেক ছোট ভাই, মা ও পরিবার নিয়ে শঙ্কায় আছেন জানিয়ে তার জমি ও জমির দলিল আত্নসাৎ, নগদ অর্থ আত্নসাতসহ প্রতারণার বিচার চেয়ে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে নিজেদের নিরাপত্তা, জমি ও দলিলসহ টাকা উদ্ধার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলত শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
এবিষয়ে বিচার প্রার্থনা করে তিনি মহালছড়ি জোন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কমিশনার (ভূমি), মহালছড়ি থানার ওসি, খাগড়াছড়িতে মানবাধিকার কমিশন, দূর্নীতি দমন কমিশন, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও মহালছড়ি প্রসক্লাবে একটি আবেদন দাখিল করেছেন।