রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন এর ৩ নং ওয়ার্ডের নতুন পাড়া। কাপ্তাই উপজেলা সদর হতে ১৫ কিঃ মিঃ সড়ক পথ এবং কাপ্তাই জেটিঘাট ঘাট হতে ট্রলার যোগে নৌ পথে পার হয়ে পৌঁছাতে হয় হরিনছড়া আমতলী পাড়া। আমতলী পাড়া হতে আধা ঘণ্টা পার হয়ে পৌঁছালাম আমতলী পাড়ায়।
এ পাড়ার সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি তেজাং তঞ্চঙ্গ্যা। বয়স ৯০ পার করেছে। জীর্ণ শীর্ণ একটি ঘরে বসে আছেন তিনি। কথা হয় তাঁর সাথে এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, তাদের এলাকার সবচেয়ে বড় কষ্ট বিশুদ্ধ পানির সংকট। ১ হাজার ফুট নীচ হতে ঝিরির পানি এনে খেতে হয়, সেই সাথে নিত্য নৈমিত্তিক কাজ সারতে হয়। এইসময় তাঁর সাথে যোগ দেন এলাকার আর এক প্রবীন ব্যক্তি ধন মোহন তঞ্চঙ্গ্যা। তাঁরা জানান, এই ৩ নং ওয়ার্ডের সবচেয়ে নীচের পাড়া আমতলী পাড়াতে একটি মাত্র টিউবওয়েল আছে। যেখান থেকে এক কলসি পানি আনতে এক ঘন্টা সময় লাগে। বিশেষ করে উঁচু পাহাড় বেয়ে নেমে আবার পানি আনতে ভীষণ কষ্ট হয়। আবার এই ঝিরির পানি পান করে অনেক সময় নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে হয় আমাদের।
এই নতুন পাড়া পাড় হয়ে আরোও এক কিঃ মি এর কাছাকাছি গিয়ে উঁচু নীচু পাহাড় পাড় হয়ে পৌঁছাতে হয় পাংখোয়া পাড়া। ১৮ টি পাংখোয়া পরিবার ও ৪ টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের বসবাস এই পাড়ায়। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ১১শ ফুটের উপরে এই পাড়া। প্রকৃতি যেন আপন মাধুরি দিয়ে সাজিয়েছে এই এলাকাকে। অনিন্দ্য সুন্দর পাহাড়, কাপ্তাই লেক আর সবুজ বন বনানী দিয়ে আবৃত এই পাড়া। কিন্তু এই সুন্দরের মাঝে লুকিয়ে আছে এখানকার পাহাড়ী জনগণের শত বছরের দুঃখ, বেদনা ও কষ্টের ইতিহাস। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে পাড়াবাসী।
এই পাড়া হতে প্রায় আড়াই কিঃ মিঃ দুরত্বে অবস্থিত আমতলী পাড়াতে গিয়ে আনতে হয় খাবার পানি। সময়, কষ্ট সব মিলে এক কলসির পানির জন্য পার করতে হয় দুই ঘন্টার উপর সময়। ফলে আশেপাশে ঝিরি হতে অনেকে পানি এনে পানি পান করে।
এই পাংখোয়া পাড়ার কার্বারী আরদৌ লিয়ানা পাংখোয়া জানান, এই ৩ নং ওয়ার্ডের হরিনছড়া নতুনপাড়া, হরিনছড়া বেচারাম কার্বারী পাড়া, আমতলী পাড়া ও দুছড়ি পাড়ায় পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা ও চাকমা সহ সর্বমোট ১শত ২০ টি পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যা প্রায় ৪ শতের কাছাকাছি। সবচেয়ে নীচে আমতলী পাড়ায় একটি মাত্র টিউবওয়েল আছে, যা হতে সকলে পানি সংগ্রহ করে। তবে সবচেয়ে দূরবর্তী পাড়া পাংখোয়া পাড়া আর নতুন পাড়ার বাসিন্দাদের কি পরিমাণ কষ্ট হয় তা বুজাতে পারবো না।
৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নবীন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা এবং ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ভানুমতি চাকমা জানান, এই পাড়ার বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় সংকট বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব। তিনি জানান, সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে অনেক উঁচু হওয়ায় এইখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করেও পানির স্বর পাওয়া যায় না। ফলে অনেক নীচে অবস্থিত আমতলী পাড়ার একটি মাত্র টিউবওয়েল বা ঝিরির পানি এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা।
১১৯ নং ভাইজ্যাতলি মৌজার হেডম্যান থোয়াই অং মারমা, দিন দিন বন উজাড় করার ফলে এইসব এলাকায় পানির স্বর নীচে নেমে গেছে।
৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, ইউনিয়ন পরিষদ এবং বিভিন্ন এনজিও হতে এই এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করার চেষ্টা করার পরও পানির লেয়ার না পাওয়া তা করা সম্ভব হয় নাই।
সম্প্রতি ঐ এলাকায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করতে যান, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মুনতাসির জাহান। এইসময় এলাকার হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনগণ তাঁকে পানির এই সংকটের কথা জানান।
সেইসময় তিনি উপস্থিত সংবাদকর্মীদের জানান, আমি নিজে এসে এই বিষয়ে দেখে গেছি। এলাকাবাসীকে একটি আবেদন করতে বলেছি। তাঁদের আবেদন এর প্রেক্ষিতে আমরা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে বসে কিভাবে এই পানির সংকট দূরীভূত হয় সেই পদক্ষেপ নিবো।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত