চট্টগ্রাম - কাপ্তাই সড়কের কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই বাস স্টেশন। পাশে ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। অদূরে কাপ্তাই প্রকৌশল একাডেমি। বেশ জনাকীর্ণ এই এলাকা। এই বাস স্টেশনের পাশে একটি ছনের চাল এবং বেড়া দিয়ে আবৃত একটি খাবারের দোকান। মাস্টার হোটেল নামে এলাকাবাসীর কাছে বেশ সুপরিচিত এটি । যেই হোটেলে ২০ প্রকারের দেশীয় মাছ খেতে পাওয়া যায়।বাচা মাছ, বোয়াল মাছ, কাতাল মাছ, রুই মাছ, শৈল মাছ, আইল মাছ, শরপুটি মাছ, কাজলি মাছ, কাচকি মাছ, টেংরা মাছ, চিংড়ি মাছ, কোরাল মাছ, বাচকুইট্যা মাছ, কালিগইন্যা মাছ, বাটার মাছ, বাইং মাছ, শিং মাছ, পাবদা মাছ, মিসালি মাছ,বাইলা মাছ সহ আরোও কয়েক প্রকার মাছ এই হোটেলে রান্না করা হয়। সেইসাথে পাহাড়ী দেশী মুরগি, বিভিন্ন পদের ভর্তাও পাওয়া যায় এই হোটেলে। তরতাজা কাপ্তাই লেক ও কর্ণফুলি নদীর মাছের স্বাদ এই দোকানে না খেলে বুজা যাবে না।সোমবার দুপুর ১২ টা.২০ মিনিট। এই প্রতিবেদক ঐ মাস্টার হোটেলে গিয়ে দোকানের ক্যাশ বাক্সে দেখতে পান ৭৩ বছর বয়সী ফয়েজ আহমেদকে। যিনি ঐ দোকানের মালিক। ফয়েজ আহমেদ এর চেয়ে মাস্টার নামে সকলে তাঁকে বেশী চিনে।
কথা হয়, ফয়েজ আহমেদ এর সাথে। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। স্বাধীনতার পর পরই তিনি সোনাগাজী হতে কাপ্তাইয়ে আসেন। দৈনিক কাজ, গাড়ীর সহকারী এবং ট্রাক চালক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এই এলাকায়। সেই সাথে অনেকজনকে তিনি গাড়ির ড্রাইভিং শিখিয়েছেন, সেই সুবাদে তাঁকে সকলে মাস্টার নামে ডাকে ।
মাস্টার ফয়েজ আরোও জানান, ২০০৩ সালে কাপ্তাই ইউনিয়ন এর পাশে কাপ্তাই বাস স্টেশনে এই হোটেল গড়ে তোলি। জিজ্ঞেস করলাম, কেন মাস্টার হোটেল নাম রাখলেন। তিনি জানান, অনেক জনকে তিনি ট্রাক চালানো শিখিয়েছেন। সেইজন্য সবাই তাঁকে মাস্টার বলে ডাকে। তাই দোকানের নাম রাখলাম মাস্টার হোটেল। তাঁর দোকানে সব মাছ তরতাজা, কাপ্তাই লেক এবং কর্ণফুলি নদীর। প্রতিদিন সকালে আমি কাপ্তাই জেটিঘাট মৎস্য আহরণ কেন্দ্র হতে মাছ নিয়ে আসি। দিনের টা দিনে পরিবেশন করি। বাঁশি খাবার রাখি না।
আমার বাসায় আমার সহধর্মিণী ও মেয়ে ঘরোয়া পরিবেশে রান্না করি এইসব খাবার । আর আমি সহ আরোও ৩ জন কাজের লোক পরিবেশন করি খদ্দেরদের। প্রতিদিন শয়ের কাছাকাছি ক্রেতা আসে। দৈনিক খরচ বাদ দিয়ে ৫০০ টাকা লাভ থাকে আমার। কারন বেশী লাভ করতে চায় না আমি।
তাঁর দোকানে প্রায়ই খেতে আসেন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, তিনি জানান এই মাস্টার হোটেলে সব কিছু তরতাজা। কর্ণফুলী নদীর এবং কাপ্তাই লেকের মাছ বিক্রি করেন তিনি। ভোজন রসিকরা এইখানে এসে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারবেন।
সোমবার দুপুরে এই দোকানে খেতে আসা বিপণন কোম্পানির প্রতিনিধি ইব্রাহীম ও শাহাজাহান এর সাথে কথা হয়। তাঁরা জানান, পেশাগত কারনে কাপ্তাই নতুনবাজার, জেটিঘাট এলাকায় আসলে দুপুরে এই মাস্টার হোটেলে দুপুরের খাবার গ্রহন করি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই হোটেলের খাবারের মান অত্যন্ত সু- স্বাদু ও মানসম্মত। বিশেষ করে বিভিন্ন পদের মাছ পাওয়া যায় এইখানে।
কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হাসান বাবু জানান,আমাদের স্কুল পরিদর্শন বিভিন্ন সময় উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের আগমন ঘটে। প্রায়ই তাদেরকে এই হোটেলে আপ্যায়ন করাই। সকলে খেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, কিছুদিন পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব, আমাদের স্কুল ভিজিট করে আসার পর ঐ মাস্টার হোটেলে গিয়ে দুপুরের আহার গ্রহন করেন। তিনি বিভিন্ন প্রকার মাছ খেয়ে অত্যন্ত খুশি হন এবং এই হোটেলের মানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, তাঁর ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব পাশে এই মাস্টার হোটেল। ইতিমধ্যে খাবার পরিবেশন এবং মানের কারনে এই মাস্টার হোটেলটি সকলের কাছে সু- পরিচিতি লাভ করেছে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত