দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর উদ্বোধনের দারপ্রান্তে পার্বত্যাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সেতু। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সবচেয়ে বড় সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও করোনা ও বিভিন্ন জটিলতায় উদ্বোধন স্থগিত ছিল। খুব শীঘ্রই এবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে রাঙামাটির বহুল প্রত্যাশিত নানিয়ারচর সেতু।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন বিগ্রেডের ২০ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়নের একটি সূত্র জানায়, আগামী বুধবার (১২ই জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে ভার্চুয়ালী সেতুটির উদ্বোধন করবেন, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ২২৫কোটি ১৩লক্ষ ১২হাজার
টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৬ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত নানিয়ারচর সেতুর কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ৫০০ মিটারের এই সেতু সেনাবাহিনীর ৩৪ ব্যাটলিয়ান কর্তৃক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশীয় আধুনিক প্রযুক্তি, নির্মাণ সামগ্রী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় সেতুটি নির্মাণ করেছে মনিকো কন্সট্রাকশন লিমিটেড। ১০টি স্প্যান ও ৯টি পিয়ার সম্বলিত এই সেতুটির ২পাশে রয়েছে ৭ দশমিক ৩মিটার ক্যারেজ ওয়ে, ২পাড়ে রয়েছে রক্ষাপ্রদ কাজ, ২দশমিক ২কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক এবং সড়ক ও জনপথের জন্য একটি বাংলো (ছায়াবিথি)।
এদিকে বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক সম্প্রসারণ ও সেতু নির্মান প্রকল্পের
এই সেতুটি নামকরণে রয়েছে স্থানীয়দের দাবি। মুক্তিযুদ্ধে ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফের অসামান্য অবদান এবং অগাধ দেশপ্রেম, অসীম সাহসিকতা, বিরল কর্তব্যপরায়ণতায় দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখায় তার নামেই ‘‘বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ সেতু’’ নামকরণ এর দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্বারকলীপি ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
অপরদিকে সেতুটির উদ্বোধন উপলক্ষে নানিয়ারচরে চলছে সাজ সাজ রব। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে শুরু হয়েছে আনন্দ উদ্দিপনা। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে খুশি এলাকাবাসী।
এবিষয়ে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন জানান, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে সড়ক ও জনপথের তত্ত্বাবধানে এই সেতু নির্মিত হয়েছে। সেতুটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪কন্সট্রাকশন বিগ্রেড কর্তৃক বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়কের ১০ম কিলোমিটারে চেঙ্গী নদীর উপর নির্মিত। ৫০০মিটার দৈর্ঘ ও ১১মিটার প্রস্তের এই সেতু ২২৫কোটি ১৩লক্ষ ১২হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। সেতুটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সেতু।
সেতুটির নামকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন নামকরণের দাবি উঠেছে। দাবির বিষয় ও তাদের আবেদনের কপি আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। নামকরণের বিষয়টি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি রহমান জানান, নানিয়ারচর সেতুটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল। সেতুটি নির্মাণের ফলে বদলে যাবে এ জনপদের সাধারণ জনগণের জীবনধারা। আগামীতে এই এলাকায় গড়ে উঠবে কলকারখানা। এতে করে স্থানীয়রা যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হবে তেমনি কাজ পাবে এলাকার শ্রমিকরা।
নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা জানান, সেতু বিভাগের মাধ্যমে সরকার দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নানিয়ারচর সেতু তার একটি অংশ। এই সেতুর মাধ্যমে স্থানীয়দের পণ্য পরিবহণে আসবে গতিশীলতা। ফলে অল্প সময়ে পাহাড়ি পণ্য পৌঁছে যাবে সমতলের বাজারে। এতে করে দেশীয় বাজারে আসবে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাব জানান, ২০১৪সালে নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি নানিয়ারচর সেতুর বিষয়টি উত্থাপন করে। প্রধানমন্ত্রী এলাকাবাসীর দাবি পূরণ করেছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। সেতুটি মুন্সী আব্দুর রউফ সেতু নামে নামকরণ করা হলে এলাকাবাসী স্বস্তি পাবে। এই উন্নয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর গ্রাম হবে শহর এই স্লোগানটির যথার্থ বাস্তবায়ন হবে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত