আসন্ন তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নওগাঁর মান্দায় আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। মাঠ চোষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এতে করে হতাশায় ভোগাসহ বিপাকে পড়েছেন আ.লীগ দলীয় প্রার্থীরা। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে দলীয় নেতা-কর্মী বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছে। বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানোর কারণে কর্মীরাও বিভক্ত হয়ে কাজ করছে যার ফলে তৃণমূলের একাংশের কর্মী সমর্থক বিদ্রোহী প্রার্থীর অনুসারী হয়ে কাজ করছে প্রকাশ্যে। গ্রাম পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়াতে হচ্ছে বারবার। নিজেরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে নির্বাচনে জয় নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া নৌকার প্রার্থীরা। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন দলের পদধারী অনেক নেতা। বহিষ্কার, ভবিষ্যতে দলের মনোনয়ন না পাওয়া, ভাল পদ না পাওয়া কোন হুশিয়ারিকে পাত্তা দিচ্ছেন না ওই সকল আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। পাওয়া তথ্য মতে জানা গেছে, আসন্ন ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ২২ জন। এর মধ্যে অনেকে দল মনোনীতদের চেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তাই বিদ্রোহী নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে দলীয় মনোনীত প্রার্থীরা। বিদ্রোহীদের কারণে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছেন নেতারা।
বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলছেন, দলীয় কোন্দলের কারণে তৃণমূল থেকে যোগ্য প্রার্থীর নাম যায়নি কেন্দ্রে। নেতারা জনপ্রিয়তা যাচাই না করে নিজেদের পছন্দমত প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। আবার কোন কোন ইউনিয়নের একক প্রার্থীর নাম পাঠিয়েছে কেন্দ্রে এমন অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীরা জানিয়েছেন জনপ্রিয়তা যাচাই না করে শুধু মাত্র সুপারিশের ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে দল। জনপ্রিয়তা নেই এমন দলীয় প্রার্থী দেয়ায় তৃণমূলের নেতা কর্মীরা মেনে নিতে পারেনি। তাই সেইসব নেতাকর্মীদের অনুরোধ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তারা । নির্বাচনের কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় নৌকা প্রতীকে প্রার্থী জানিয়েছেন, আমাদের ইউনিয়নে আমরা দুইজন শক্তিশালী প্রার্থী। দলীয় প্রতীক বরাদ্দের আগে আমার ইউনিয়নের বর্তমান বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছিল, যে দলীয় প্রতীক পাবে সেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে অথচ এখন তার বিপরীত। এবিষয়ে একাধিক নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও ভোটাররা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগছে । কর্মী ও ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভুলভাল বোঝাচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এছাড়াও কয়েকটি ইউনিয়নে উপজেলার শীর্ষ নেতাদের নিকট আত্মীয়রা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ এখন পর্যন্ত কোনো জোরালো ভূমিকা দেখতে পাইনি তাদের পক্ষ থেকে। দলীয় নেতাদের নিরব ভূমিকা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সুযোগ নিচ্ছে অন্য প্রতীকের প্রার্থীরা।
অপরদিকে নির্বাচনে বিএনপি না আসাসহ স্থানীয় নানা সমীকরণের কারণে বিদ্রোহী হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। এছাড়া গতবার বিদ্রোহী হয়ে যারা চেয়ারম্যান হয়েছেন কিংবা পাশ করতে পারেননি, তারা সঙ্গত কারণে দলের মনোনয়ন পাননি; বিদ্রোহী চেয়ারম্যান ও নির্বাচন করছেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকে এবারও নির্বাচন করছেন।
নির্বাচনকে ঘিরে বিদ্রোহী প্রার্থী,নৌকা সমর্থিত প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পোস্টার ছেঁড়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করছে প্রশাসনের কাছে। জানা গেছে, আ.লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বেশি পেরেশানি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের। রিটার্নিং কর্মকর্তা বারবার নিয়ম মেনে চলার তাগিদ দিচ্ছেন প্রার্থীদের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বাক্কার সিদ্দিক বিভিন্ন ঝামেলা বা অভিযোগের পরে তাৎক্ষণিক উভয় প্রার্থীদের ডেকে সতর্ক করে নিয়ম-কানুন মেনে চলতে বলেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নাহিদ মোর্শেদ বাবু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বলেন,আমরা দল থেকে মনোনয়ন চাওয়া সকলের নাম অতি যত্ন সহকারে কেন্দ্র পাঠিয়েছি। দল যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দিয়েছে। সেই সাথে রাগ অভিমান ভুলে বিদ্রোহী প্রার্থী না হয়ে, নৌকা প্রতীকের জন্য নির্বাচন করার আহ্বান জানান সকলকে। বিদ্রোহী করলে দলে ঠাঁই হবে না বলে জানিয়েও দেন তারা। এর পরও অনড় অবস্থানে থেকে গেছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। নৌকার বিজয়ের লক্ষ্যে প্রার্থীদের নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রচার প্রচারণা করে চলেছেন তারা।
মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট আগামী ২৮ নভেম্বর। ওই ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থীর’ ছড়াছড়ি। ইউনিয়নগুলোতে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে ২২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত