আনোয়ার হোসেন পানছড়ি, খাগড়াছড়ি::
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়িতে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী তক্ষক।সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এ ঘটনায় আটক শুক্র সেন চাকমা একজন *তক্ষক পাচারচক্রের মূল হোতা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য অঞ্চলে গোপনে বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে পানছড়ি থানাধীন ০৩নং পানছড়ি ইউনিয়নের কলোনীপাড়ায় অভিযানে নামে পুলিশ। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম সংলগ্ন নির্মাণাধীন উপজেলা জিমনেশিয়ামের সেমিপাকা টিনের ঘরের দক্ষিণ কোণে শুক্র সেন চাকমা ও তার সহযোগীরা তক্ষক কেনাবেচার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য আসে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শুক্র সেনসহ চারজনকে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি জীবিত তক্ষক উদ্ধার করা হয়, যা পাচারের উদ্দেশ্যে বিক্রির চেষ্টা চলছিল বলে জানা গেছে।
১। শুক্র সেন চাকমা (৪৭) পিতা- আনন্দ মনি, মাতা- মনি চাকমা, সাং- অক্ষয় পাড়া, ০৭নং ওয়ার্ড, পানছড়ি সদর ইউনিয়ন, থানা- পানছড়ি, জেলা- খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।
২️। মোঃ মামুনুল হক ওরফে খোকন (৪৭), পিতা- আঃ হক, মাতা- মামুনা খাতুন, সাং- গজারিয়া, পূব চন্দ্রপুর ইউনিয়ন, থানা- দাগনভূঞা, জেলা- ফেনী।
৩️। সরোয়ার হোসেন (৫০), পিতা- মৃত দেলোয়ার হোসেন, মাতা- ছায়েরা খাতুন, সাং- পূর্ব বিজয় সিংহ, ১৩নং ওয়ার্ড, ফেনী পৌরসভা, থানা- ফেনী সদর, জেলা- ফেনী।
৪️। মোঃ লিটন (৪৪), পিতা- মৃত মিলন মিয়া, মাতা- আনোয়ারা বেগম, সাং- পূর্ব বিজয় সিংহ, ১৪নং ওয়ার্ড, ফেনী পৌরসভা, থানা- ফেনী সদর, জেলা- ফেনী।
পানছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জসীম উদ্দিন জানান, স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া যায় যে শুক্র সেন চাকমা পাহাড়ি এলাকায় তক্ষক ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ধরে বিক্রির সঙ্গে জড়িত একটি চক্র পরিচালনা করছে। তিনি বলেন,আমরা গোপন সূত্রে খবর পাই যে, শুক্র সেন চাকমা তক্ষক বিক্রির জন্য কয়েকজন ফেনী জেলার ক্রেতার সঙ্গে লেনদেন করতে আসছে। পরে অভিযান চালিয়ে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। তক্ষকটি জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।”
ওসি আরও জানান, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী মামলা করা হচ্ছে। উদ্ধার করা তক্ষকটি সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, শুক্র সেন চাকমা এলাকার একজন পরিচিত ব্যক্তি হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরেই তক্ষক ব্যবসার” সঙ্গে জড়িত বলে গোপনে আলোচনা ছিল। অনেক সময় পাহাড়ি জঙ্গল থেকে বিভিন্ন প্রাণী সংগ্রহ করে বাইরের জেলার কিছু ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
একজন স্থানীয় সমাজকর্মী বলেন, আমরা বহুবার তাকে এ ধরনের কাজ না করতে বলেছি। কিন্তু সে গোপনে বাইরের লোক এনে এসব অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছিল। আজ অবশেষে পুলিশ তাকে ধরেছে, এতে এলাকার মানুষ স্বস্তি পেয়েছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, তক্ষক বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী, যা আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এই প্রাণী পাচারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকে, যারা এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাচার করে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এমন অপরাধে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
পানছড়িতে তক্ষকসহ শুক্র সেন চাকমা ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার স্থানীয় প্রশাসনের একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।