নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই তিন পার্বত্য জেলা শুধু পাহাড় নয়, এগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সম্পদের প্রতীক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনো এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির স্থায়ী পরিবেশ তৈরি হয়নি। সময় এসেছে আমরা সবাই মিলে জেগে উঠি, যাতে কেউ দাঙ্গা লাগিয়ে আমাদের একতা নষ্ট করতে না পারে।
১৯৯৭ সালের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির পরও পাহাড়ে অস্থিরতা, অবিশ্বাস ও বিভেদ রয়ে গেছে। বিদেশি কিছু শক্তি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক দেশীয় দালালরা নানা সময় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ব উসকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। কেউ কেউ বিভেদের আগুন জ্বালিয়ে রাজনীতি, সম্পদ ও প্রভাব বিস্তারে মেতে ওঠে। অথচ ক্ষতি হয় নিরীহ সাধারণ মানুষের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানির নতুন খেলা:
সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে, কিছু পোষা একটিভিস্ট যারা বিদেশি তহবিল বা দেশীয় দালালদের ইঙ্গিতে কাজ করে তারা নানান নামে-বেনামে ভুয়া আইডি খুলে উস্কানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। চাকমা, মারমা, বাঙালি, ত্রিপুরা এসব জাতিগত পরিচয় ব্যবহার করে তারা এমন সব পোস্ট ও কমেন্ট করে, যা পাহাড়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং জনগণের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি করে। এই একটিভিস্টদের লক্ষ্য খুব পরিষ্কার সাধারণ মানুষের মনে ভয় ঢোকানো, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানো, এবং পারস্পরিক অবিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিছু ভুয়া পেজ থেকে এমনভাবে পোস্ট দেওয়া হয় যেন পাহাড়ে বাঙালিরা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর শত্রু, আবার কোথাও এমনভাবে দেখানো হয় যেন পাহাড়িরা বাঙালিদের জন্য হুমকি। এই দুই ধরনের গোষ্ঠীই আসলে এক সূত্রে গাঁথা তারা বিভেদ চায়, শান্তি চায় না।তাদের এই অনলাইন দাঙ্গা এখন রাস্তায়, গ্রামে, পাড়ায় প্রভাব ফেলছে। তাই সময় এসেছে সবাই মিলে বলার — গুজব নয়, সত্য চাই; দাঙ্গা নয়, একতা চাই।
কে লাভবান, আর কে ক্ষতিগ্রস্ত:
এই অস্থিরতার সুযোগ নেয় অল্প কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জমি দখলকারীরা, ভুয়া মানবাধিকার ব্যবসায়ীরা, এবং রাজনীতির দালালরা। তারা চায়, পাহাড় অশান্ত থাকুক, যেন তারা ছায়ায় নিজের কাজ চালাতে পারে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালি মানুষ — যারা প্রতিদিন পরিশ্রম করে বাঁচে, যারা উন্নয়ন চায়, স্কুল–রাস্তা–চিকিৎসা চায়।
এখন দরকার সচেতনতা ও ঐক্যের পদক্ষেপ:
প্রতিটি উপজেলায়, প্রতিটি ইউনিয়নে পাহাড়ি ও বাঙালি মিলেমিশে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শান্তি সভা আয়োজন করা দরকার। মাসে অন্তত একবার একসাথে বসে পারস্পরিক সমস্যা আলোচনা করতে হবে।
স্থানীয় সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও সমাজনেতাদের একত্রে এসে সত্য তথ্য যাচাই করতে হবে, যেন কেউ ভুয়া প্রচারণা চালাতে না পারে। যুব সমাজকে শেখাতে হবে কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব চিনে ফেলা যায়। যেকোনো সন্দেহজনক পোস্টের উৎস যাচাই না করে শেয়ার না করতে হবে।।প্রশাসনকেও এই তথ্যযুদ্ধের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে, যেন ভেতরের অশান্তি আবার কোনো বহিরাগত শক্তি কাজে লাগাতে না পারে।
শেষ কথা শান্তিই আমাদের শক্তি:
পাহাড় আমাদের সবার। কোনো উপজাতি, কোনো বাঙালি আলাদা নয়। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক, সবাই এই ভূখণ্ডের সন্তান। আমরা চাই উন্নয়ন, চাই শান্তি, চাই নিরাপত্তা। তাই সবাই মিলে একতা ঘোষণা দিতে হবে যেন কেউ বাইরের প্রভাব বা ভেতরের দালালদের খেলা দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করতে না পারে।
এই পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের হৃদয়ের অংশ।
এখানে একদিন সত্যিকারের সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা হবে যদি আমরা এখন থেকেই সচেতন হই, একে অপরের পাশে দাঁড়াই, এবং একসাথে বলি আমরা বিভেদ চাই না, আমরা শান্তি চাই।
লেখক : এম এইচ মানিক
মানবাধিকার কর্মী