ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই( রাঙামাটি) প্রতিনিধি: রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর ৬ নং ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা লাকি তনচংগ্যা। সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করার পাশাপাশি ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাহাড় এবং সমতল ভূমির ১২ একর জমিতে তিনি মিশ্র ফল চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন। শুধু মিশ্র ফল চাষাবাদেই নয়, একই এলাকায় গবাদিপশুর খামার এবং খামার হতে দুধ উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষিভিত্তিক পরিবার-অর্থনীতি। তিনি শুধুমাত্র সফল একজন কৃষক নন, তিনি একজন পরিপূর্ণ নারী উদ্যোক্তা।
কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে লাকি তনচংগ্যার। তিনি বলেন, ২০০৩ সালে আমি এবং আমার স্বামী ১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর ৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাহাড় ও সমতল ভূমিতে আম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, ভুট্টা, শসা, বড়ই সহ নানা ফল-সবজির চাষাবাদ শুরু করি। ২০০৫ সালের মধ্যে আমার আমের বাগানে আম্রমালি, রাঙ্গুই এবং মল্লিকা জাতের আমের ফলন ধরে। ফলন ধরার পর পরই এই আমের ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়, বিশেষ করে আমাদের বাগানের আম্রপালির আম অতি সু-স্বাদু হওয়ায় পার্বত্যঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা এই আম আমাদের তালুকদার সবুজ খামারের দোকান হতে নিয়ে যাই দেশের প্রত্যন্তঞ্চলে। এছাড়া এর কয়েকবছর পর চায়না -২, চায়না -৩ ও দেশী লিচু গাছে লিচুর ফলন ধরে। এর চাহিদাও বেড়ে যায়। প্রতিবছর আমাদের বাগানে এই সব মিশ্র ফলের ফলন ধারাবাহিকভাবে ভালো হয়ে আসলেও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে মাঝে মাঝে ফলনে ছন্দ পতন হয়। তবে আমরা এই মিশ্র ফল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছি।
লাকি তনচংগ্যা আরোও বলেন, আমাদের খামারে বর্তমানে ৬ থেকে ৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এই কর্মসংস্থান পেয়ে কিছু মানুষের বেকারত্ব কমেছে এবং শ্রমিকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এছাড়া কিছু যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছি, যারা এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করছেন।
১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান এবং নারী উদ্যোক্তা লাকি তনচংগ্যার সহধর্মীনি অরুণ তালুকদার বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ৪ টি গরু নিয়ে গবাদিপশু পালন শুরু করলেও এখন আমাদের খামারে প্রায় ১২ টি গরু আছে। আর এই সব গরু হতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। দুধ উৎপাদনে মনোযোগ দিয়ে বর্তমানে খামার থেকে ভালো আয়ের পাশাপাশি স্থানীয় দুধের চাহিদাও পূরণ করছি।
লাকি তনচংগ্যার খামার ও বাগান দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন রামপাহাড় দেবতাছড়ি এলাকার জীবন তনচংগ্যা ও তার সহধর্মিণী। তারা জানান, “লাকি তনচংগ্যার দিক নির্দেশনায় আমরা ভালো কাজ করছি। এখানে কাজ করে আমাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান আহমেদ বলেন, “লাকি তনচংগ্যার উদ্যোগ অন্যদের জন্য মডেল। তার মতো উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে কৃষির সম্ভাবনা বাড়ছে এবং যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
কাপ্তাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. এনামুল হক হাজারী বলেন, “দুধ উৎপাদন ও গবাদিপশু পালনে লাকি তনচংগ্যার খামার স্বাস্থ্যসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রশংসনীয়।।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত