আনোয়ার হোসেন,পানছড়ি প্রতিনিধিঃ
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় এক স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জনাব ফারহানা নাসরিন।
সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মনিরুজ্জামান, যিনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা, নিরীহ বাঙালিদের ওপর চালানো গণহত্যা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের হৃদয়বিদারক কাহিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “২৫ মার্চ ছিল একটি বিভীষিকাময় রাত, যখন নিরীহ মানুষ হত্যার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বীর বাঙালিরা সেই ভয়াবহতার মধ্যেও মাথা নত করেনি, বরং রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার পথ সুগম করেছিল।”
উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আলোচনার মূল বক্তব্য
উক্ত আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন পানছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জসীম উদ্দিন এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ বেলাল হোসেন। তারা জাতির এই শোকাবহ দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে এবং সেই চেতনা ধারণ করে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র প্রতিনিধি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আলোচকরা ২৫ মার্চের কালো রাতের ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, গণহত্যা শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, এটি আমাদের চেতনার অংশ। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা কোনো সহজ অর্জন নয়; লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।
নীরবতা পালন ও অন্যান্য কর্মসূচি
সভা শেষে সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া, দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে—উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোচনা সভা আয়োজন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শহীদদের আত্মত্যাগের ওপর বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী এই কর্মসূচির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
২৫ মার্চ গণহত্যা: ইতিহাসের কালো অধ্যায়
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে এক পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালায়, যার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা, রাজারবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হয়। এই গণহত্যার মধ্য দিয়েই শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ, যা নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে সফল হয়।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ আলোচনা সভা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।