জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের আওতায় হতদরিদ্র মানুষের পুষ্টিহীনতা দূর করতে গত কয়েক বছর ধরে পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল সরবরাহ করছে সরকার। ‘পুষ্টি চাল’ হিসেবে পরিচিত এসব চালে ভিটামিন-এ, বি-১ এবং বি-১২ এবং ফলিক এ্যাসিড, আয়রন ও দস্তার মতো উপাদান মেশানো হয়। এ চাল সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভিজিএফ এবং ভিজিডি হিসেবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে হতদরিদ্র উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। খাগড়াছড়ির রামগড়ে পুষ্টি মিশ্রিত চাল বিতরের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা আসে। নির্দেশনা আসায় রামগড় খাদ্য বিভাগ ৭৩ টন চাল সংগ্রহ করে জেলার একটি অটো মিলে পুষ্টি মেশাতে নিয়ে যায় কিন্তু পাঠানো চালে পোকা মিশ্রিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় খাদ্যবিভাগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। চালগুলো চলতি বোরো মৌসুমে সংগৃহিত বলে জানা যায় কিন্তু নতুন চালে পোকা থাকার কথা না। অভিযোগ উঠেছে, রামগড়ের একটি অটো মিলের মাধ্যমে বাজার থেকে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করে পুষ্টি মিশ্রণের জন্য নেয়া হয় প্রায় ৭৩ টন চাল। সবগুলি চাউলে পোকা পাওয়া যায়।
জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল থেকে চলতি বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করে খাদ্য বিভাগ। গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ধান-চাল সংগ্রহের জন্য আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বর্ধিত করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ ধরণের ৭৩ টন চাল রামগড় খাদ্যগুদাম থেকে পুষ্টি মেশানোর জন্য জেলার মেসার্স বেগম অটো রাইচ এন্ড ফ্লাওয়ার মিলে পাঠানো হয়। মিল কর্তৃপক্ষ এসব চালে পোকার উপস্থিতি দেখে উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করলেও পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে পুষ্টি চালে পোকার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসে। অভিযোগ উঠেছে, নিম্নমানের কিংবা মেয়াদহীন চাল সংগ্রহ করার কারণে এসব চালে পোকা এসেছে।
এ বিষয়ে পুষ্টি মিশ্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত মেসার্স বেগম অটো রাইচ এন্ড ফ্লাওয়ার মিলের ম্যানেজার মিল্টন বড়ুয়া বলেন, ‘১৮-১৯ আগস্ট রামগড় খাদ্যগুদাম থেকে ভিজিডির ৭৩ টন চাল এসেছে। এসব চালে সামান্য পোকা ছিল। পুষ্টি মেশানোর পর পোকা আর নেই।’ নতুন সংগৃহিত চালে কিভাবে পোকা আসলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি গুদাম কর্মকর্তা বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম খানের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের এক খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘চলতি মৌসুমে সংগ্রহ করা চালে এতো দ্রুত পোকা আসার কথা নয়। যেসব চালে পোকা এসেছে এগুলোর পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন, চালগুলো চলতি বোরো মৌসুমের কিনা খতিয়ে দেখার দরকার।
এ বিষয়ে জানতে রামগড় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার আসাদুজ্জামান ভুইয়া’র মুঠো ফোনে কয়েকবার ফোন করেও রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রামগড় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিমো চাকমার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে উনি চিকিৎসা কাজে রামগড়ের বাহিরে আছেন বলে জানান এবং এবিষয়ে পরে বক্তব্য দেয়ার কথা থাকলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মিটিংয়ে থাকায় এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামগড় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ভুইয়ার বিরুদ্ধে নিম্ন মানের চাল সংগ্রহ নতুন নয়। ইতিপূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ সরাইল খাদ্য গুদাম এবং চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া খাদ্য গুদামে কর্মরত থাকাকালেও নিম্নমানের ধান-চাল সংগ্রহের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৭ মে রাঙ্গুনিয়া খাদ্যগুদাম থেকে প্রত্যাহার করে তাকে শাস্তিমুলক বদলি করা হয়। রামগড়ে যোগদানের পরপরই তার অফিস থেকে ঘুষের ৭লক্ষ টাকা চুরির অপবাদে সেইসময়ে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত থাকা সুমন মারমা কে আটক করে ভয়ভীতি ও মারধর করলে সুমন মারমা বিষপানে আত্মহত্যা করে। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সুমনের পরিবার ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দায়মুক্ত হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জনৈক সাবেক মেম্বারের মাধ্যমে গুচ্ছগ্রামের চাল গম ক্রয় করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করারও আলোচনা আছে সর্বত্র। সর্বশেষ প্রচার প্রচারণা ছাড়া কৃষকদের থেকে ধান চাল সংগ্রহ করার অভিযোগ করেছেন অনেক কৃষক।
খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কাজিন জাহান বিন্দু বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত নন। পরে সুনির্দিষ্ট পুষ্টি চালে পোকা ও ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে অবগত করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দেখছি।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত