আজ প্রায় চারটি বছর কেটে গলো।কিন্তু সমাধান হলো না রোহিঙ্গা ইস্যুর।দেশে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি হওয়াতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে খুব একটা নড়চড় নেই।রোহিঙ্গা জনগোষ্টি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে ২৫শে আগস্ট ২০১৭ সালের দিকে।বাংলাদেশে আসে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এদের সাথে আগে কক্সবাজার জেলায় এখন ১০ লাখ রেহিঙ্গা শরণার্থীর আবাসভূমি। এদের ছয় লাখ এখন আছে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত কুতুপালং মেগা শিবিরে। আর এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।
তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার আরেকটি প্রয়াস কার্যত ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তবে বাংলাদেশ এখনও হাল ছাড়েনি, সরকারের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের রাজি করানো সম্ভব হবে। এই আশাবাদের কারণ বাংলাদেশের কূটনৈতিক দেন-দরবারের কারণে প্রথমবারের মতো চীন এবার এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছে। কিন্তু চীনকে সম্পৃক্ত করেও তেমন কোনো সাফল্যের লক্ষণ এখনও নেই। রোহিঙ্গাদের মনে নিরাপত্তার ভরসা তৈরি করতে মিয়ানমার যে উল্লেখযোগ্য কিছু করছে তার কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। তাহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের ওপর এতটা ভরসা করা কতটা সঙ্গত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য?
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বাইরে তৃতীয় দেশ হিসেবে শুধু চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। তবে অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত নিরাপত্তাসহ আরও নানা ইস্যুতে মিয়ানমার ও চীন একে অপরের ওপর অনেক নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে সম্পর্কও বেশ ঘনিষ্ঠ। চীনের সমর্থন ছাড়া মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের মদদ পাওয়া বেশ কঠিন। কাজেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে, বাংলাদেশের সহায়তায় চীন কতটা এগোবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
কেন চীন মিয়ানমারের উপর নির্ভরশীল? চীন এমন কয়েকটি ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর নির্ভরশীল।
মিয়ানমারের ভেতরে চীনের বহু দশকের বিনিয়োগ রয়েছে। বিশেষ করে ষাটের দশক থেকে মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসন এবং অতি সম্প্রতি যে দলীয় রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক
ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। প্রথমত মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় চীনের স্বার্থ। এবং দ্বিতীয়ত চীনের গ্যাস এবং জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সম্পৃক্ততা। এ কারণে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চীন বড় কোনো চাপ প্রয়োগ করবে বলে তিনি মনে করেন না।বারবার বাংলাদেশে এই ইসু নিয়ে তুলপাড় হলেও কোনো সমাধান মেলেনি। ব্যবসা বাণিজ্য বিশেষ করে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে জন্য তারা মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের মাধ্যমে তাদের জ্বালানি সরবরাহের বিকল্প একটি ব্যবস্থা করে রেখেছে।এর কারণ চীনের একটা বিশাল অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক স্বার্থ রয়েছে।যা নিমিশেষেই বুঝা যায়।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক বৈরী হলেও মিয়ানমার প্রশ্নে এই দুই দেশ গত দুই তিন দশক ধরে একই নীতিমালা অনুসরণ করে আসছে। আর তা হলো, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যাই ঘটুক না কেন, বাইরে থেকে তারা কোনো ধরনের চাপ আসতে দেবে না। ফলে ভারত বাংলাদেশের অন্যতম মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে নেই। প্রকৃত প্রস্তাবে চীন বা ভারত কোনো দেশই নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশের স্বপক্ষে এসে দাঁড়াবে না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই সত্য বাংলাদেশ যত দ্রুত অনুধাবন করতে পারবে ততই মঙ্গল। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই সংকটপূর্ণ অবস্থা চলতে থাকলে সন্ত্রাসবাদ জন্য নিতে পারে সম্প্রতি এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টাকে আদৌ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে মিয়ানমার, চীন বা ভারত? এমন প্রশ্নও রয়েছে। আর এর উত্তরে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সন্ত্রাসবাদের এই আশঙ্কাকে মিয়ানমার, চীন বা ভারত সবাই আমলে নিয়েছে। কিন্তু আপাতত তারা এই মুহূর্তে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আপেক্ষিক স্বার্থের দিকগুলোকেই বেশি বিচার-বিবেচনা করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে রোহিঙ্গা সংকট সামাল দিতে আরও বাস্তবসম্মত নীতিমালা গ্রহণ করার পাশাপাশি, স্বনির্ভর হয়ে ওঠা প্রয়োজন বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনা টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।যেখানে বাদ যায়নি রোহিঙ্গারাও।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর দ্বীপে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। সোমবার ১৬ আগস্ট এ টিকা প্রদান করা হয় ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গাকে।আরো প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যখন খাদ্যের প্রয়োজন হচ্ছে খাবার দিচ্ছে, যখন কাপড় প্রয়োজন হচ্ছে কাপড় দিচ্ছে এককথায় যখন যা প্রয়োজন হচ্ছে তাই দিচ্ছে বর্তমান সরকার ও বিদেশি সংস্থা গুলো। যাদের মধ্যে ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।সুতারাং বুঝাই যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের খুব খাতির যত্ন করা হচ্ছে। কোন কিছুতে কমতি রাখছেন বাংলাদেশ সরকার।দায়িত্ব নিয়েই সবকিছু করে যাচ্ছে।
তবে অন্য দেশের ওপর অতিনির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের উচিত অর্থনৈতিক নীতিমালা শক্তিশালী করা। দেশের অভ্যন্তরে সমর্থনের যে ঘাঁটি রয়েছে সেটা গড়ে তোলা। যেন বাংলাদেশ নিজের দেখাশোনা নিজেই করতে পারে।যেকোনো দুর্বল জনগোষ্ঠী যখন কোনো সবল জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে উঠে দাঁড়ায়, তখন তাদের কেউই সমর্থন করে না বা সমর্থন করলেও অতি সীমিত সমর্থন করে। তেমনি বাংলাদেশ বা রোহিঙ্গা কারও ব্যাপারেই কোনো রাষ্ট্র নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে অন্য রাষ্ট্রকে সমর্থন করতে যাবে না।রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান না হলে বাংলাদেশ বেকায়দায় পড়ে যাবে।সম্প্রীত দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোহিঙ্গাদের আস্তানায় হানা দেয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীরা।বিভিন্ন জায়গা থেকে ইয়াবা সহ গ্রেপ্তার করেছে অনেক রোগিঙ্গাকে।রোগিঙ্গা সম্বলিত বা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশেপাশের অনেক লোকজন তাদের কাছে জায়গা-জমি বিক্রি করে বাংলাদেশে থাকার স্থান করে দিয়েছে।সুযোগ করে দিচ্ছে এনআইডি কার্ডেরও।
ভুয়া জন্ম নিবন্ধন বানিয়ে এনআইডি কার্ড করে নিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা আদিবাসীরা।যার কারণে পার্বত্য জেলাগুলোতে জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি কার্ডের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের লোকজনেরাও জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা কার্যক্রমে যার ফলাফল বাংলাদেশের এক ভয়াবহতা প্রকাশ করে। পার্বত্য বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলা গুলোতে রোহিঙ্গা কার্যক্রম বেড়ে গেছে।রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান হলে অনেকটা ইয়াবা কারবারী কমে আসবে সাথে পার্বত্য জেলাগুলো অনেকটা আপরাধ কর্ম কমে আসবে।এর ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।অন্যথায় রোহিঙ্গা ইস্যু কাল হয়ে দাড়াবে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত