রাজবাড়ির গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পদ্মা নদীতে গোসল করতে গিয়ে ৬ দিনেও খোজ মেলেনি সুলতান নামের এক শ্রমিকের
অন্য দিনের মত ১৮আগস্ট সন্ধ্যার একটু আগে কাজ শেষ করে ২নং ফেরিঘাটের মাথায় নদী পারে লুঙ্গি, মোবাইল ও টাকা রেখে গোসল করতে নামেন পদ্মা নদীতে। কিন্তু সেই যে পদ্মায় নেমেছেন আজ ৬দিন হয়ে গেলেও উদ্ধার করা যায়নি তাকে, মাইকিং করেও খোঁজ মেলেনি পদ্মা নদীর কোথাও।
এক দিকে তাকে খুঁজে না পাওয়ার কষ্ট অন্যদিকে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে পরিবারটি।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে নিখোঁজ স্বামীর জন্য কাঁদতেও পাড়ছেন না সুলতান শিকদারের স্ত্রী অসহায় সেলিনা আক্তার (২৭)। একই অবস্থা বৃদ্ধা মা আনোয়ারা বেগম (৫৪)। ছেলের শোকে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন তিনি। সুলতানের অবুজ শিশু শান্তি (১১) ও রাবেয়া (৫) ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নদীর পানে কখন তাদের বাবা ঘরে ফিরে আসে সেই আসায়।
নিহত সুলতানের স্ত্রী সেলিনা আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, উনিই ছিল আমাদের সব। তার আয়েই চলত আমাদের সংসার। কিন্তু আজ ৬দিন হয়ে গেল আমাদের ছেড়ে চলে গেল সে, এখন আমাদের কি হবে। দুই মেয়ে ও শাশুড়ীকে নিয়ে আমি কোথায় যাব, কিভাবে চলবো, কি খাওয়াবো তাদের, আমাদের তো বাঁচার মত কোন অবলম্বনই রইলো না।
ছেলে হারানোর শোকে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম, কথা বলার শক্তিও হাড়িয়ে ফেলেছেন তিনি, এ অবস্থায় তিনি বলেন, আমাদের কেউ নেই বাবা , আমাদের এখন কি হবে, আমরা কিভাবে বাঁচবো। আমার ছেলেরে তোরা আইনা দে এই কথা বলতে বলতে তিনি কাঁদতে থাকেন।
স্থানীয়রা জানায়, সুলতানের পরিবারটি নিতান্তই গরিব। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতো। বাড়িতে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। চারজন নারী এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে গেল বলা যায়। এই অবস্থায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক খান বলেন, সুলতান নিখোঁজে দ্বিতীয় দিন আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তার পরিবারের খোঁজ খবর নেই। উর্দ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে পরিবারটির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় গোসল করতে নেমে পদ্মায় নিখোঁজ হন সুলতান শিকদার নিখোঁজের ৬দিন (মঙ্গলবার, ২৪আগস্ট) পার হলেও আজও সুলতানকে খুঁজে পাওয়া জায়নি। গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) ভোর থেকে যৌথভাবে কয়েক দফা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এবং পাটুরিয়া ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের
একটি ডুবুরী দল। কিন্তু নদীতে প্রচন্ড স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হওয়ায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, এ উদ্ধার কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। পরে স্বজনেরা পদ্মার নদীর বিভিন্ন অঞ্চলে মাইকিং করেও তার সন্ধান পায়নি।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত