অসীম রায় (অশ্বিনী) বান্দরবান:
ঘুষ আর দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক, গড়েছেন আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে কিনেছেন কোটি টাকার জমি ও পর্যটন স্পট। নাজমুল আলম বর্তমানে বান্দরবানের লামা উপজেলায় নির্বাহী অফিসের সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষিক অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছেন। তার আয়ের সঙ্গে নজিরবিহীন বৈসাদৃশ্য রয়েছে সম্পদেরও। এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য এখন মানুষের মুখে মুখে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে সালে সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক অপারেটর হিসেবে ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকার বেতনের চাকুরীতে যোগদান করেন তিনি। এরপর থেকে তিনি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সরকারি দপ্তরের পদবী ব্যবহার করে অবৈধ পন্থায় রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। নাজমুল আলমের পিতা ওসমান গনি দুলাল উপজেলা ভূমি অফিসের চেইনম্যান। পিতা ও পুত্রের যোগসাজশে অবৈধপন্থায় গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
স্থানীয়রা জানান, ২০-২৫ বছর আগে চাকরি সূত্রে নোয়াখালী থেকে জেলার লামায় আসেন নাজমুল এর পিতা। লামা এসে পৌরসভার বড় নূনারবিল ৭ নং ওয়ার্ড বাড়ির জন্য ৫ শতক জায়গা কিনে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে নাজমুল চাকরিতে যোগদান করার পর রাতারাতি বদলে যায় সবকিছুই। হঠাৎ এমন বিত্তশালী হওয়ার প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। নাজমুল আলমের ছোট ভাই লামা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বড় ভাইয়ের সাথে যোগসাজশে অফিসের সবাইকে ম্যানেজ করে ঠিকাদারি কাজ করতেন বলেও অভিযোগ উঠে।
নাজমুল আলম যেসব সম্পদের মালিক:-
উপজেলার মিরিংঞ্জা মুরুং পাড়ার পাশে আম ও সেগুন বাগান রয়েছে ৫ একর, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ২০ লক্ষ টাকা। কলেজের সামনে মার্কেটসহ ৫ শতক জায়গা, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১০ লক্ষ টাকা। লামা থানার সামনে টাইলসের দোকান, যার বাজার মূল্য ২০ লক্ষ টাকা। একটি এক্স নোহা, যার নাম্বার চট্টমেট্টো-চ ১২-০১৪৭, বাজার মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা। একটি চান্দের গাড়ি, যার বাজার মূল্য ৪ লক্ষ টাকা। দুটি টাটা কোম্পানির ট্রাক গাড়ি যার মধ্যে একটি গাড়ির নাম্বার চট্টমেট্রো ট-১২-১৩২৭ , বাজার মূল্য ২৫ লক্ষ টাকা।
লামা সাবেক বিলছড়ির ৬ নং ওয়ার্ডে সিলেটি পাড়া এলাকায় ৬ একর পাহাড় জুড়ে সেগুন বাগান সহ, ৪ কানি ক্ষেতের জায়গা রয়েছে তার নামে, যার বাজার মূল্য কোটি টাকা। এই জায়গা ব্যতীতও ৪ বছর আগে ২০ শতক জায়গা ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছেন লামার মুখ এলাকায় বিটিসির বৃটিশ ট্যাবাকোর ফ্লিডম্যান হান্নানকে।
সিলেটি পাড়া সাবেক বিলছড়িতে, পাহাড়ের এক কানি বিক্রি করছে ৪ লক্ষ টাকায়। ৬ একর পাহাড়ের বাজারমূল্য ৬০ লক্ষ টাকা। ১ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। লামা বাজারের মধ্যে সানা ফ্রেব্রিক্স ও শাহ্ জব্বারিয়া ক্লথ ষ্টোর নামে দুটি কাপড়ের দোকানের পার্টনার।
লামা পর্যটন খাতেও ৩ একর জায়গা জুড়ে মারাইংছা হিল ও ১০ একর জায়গা জুড়ে রিভার ভিউ নামে রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার রয়েছে। মারাইংছা হিলের সাথে ব্যক্তিগত আরও ৫ একর জায়গা কিনেছেন ৫ লক্ষ টাকায়।
সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বান্দরবানের বাসিন্দা না হলেও পার্বত্য আইন অমান্য করে ৩০৩ নং ডলুছড়ি মৌজায় ৩য় শ্রেণীর ২৫ একর জায়গা ক্রয় করেন। আর অবৈধ একাজে সহায়তা করে সাবেক মন্ত্রীর কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেন নাজমুল আলম। তাছাড়াও নাজমুল আলম সরকারি দপ্তরে পদবী ব্যবহার করে লামা ছাগলখাইয়্যা এলাকায় বালুর পয়েন্টে রয়েছে শেয়ার।
যা বললেন স্থানীয়রা:-
লামার ৬ নং ওয়ার্ডের সিলেটি পাড়ার বাসিন্দা আলী আহম্মেদ বলেন, নাজমুলরা গত বছর অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে আসা গরু ব্যবসা থেকে টাকাওয়ালা হয়ে গেছেন। ঐখান থেকেই টাকা কামায়ছে, তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক, জিরো থেকে হিরো হয়ে গেছে।
লামার বড় নূনারবিল চহ্লাচিং মার্মা (৬৮) বলেন, শূণ্য থেকে তারা আজ অনেক টাকার মালিক। বাপদাদার কোনো সহায় সম্পদ ছিলো না, ২০ বছরে তার বাবা বাড়ির জন্য একটি জায়গা কিনেছেন। এত সম্পদ কিভাবে হলো তদন্ত হওয়া দরকার।
মারাংছা হিল রিসোর্ট ব্যতীত আর কোনো সম্পদ তার নয় বলে জানান অভিযুক্ত নাজমুল আলম। তিনি আরও বলেন, এইসব সম্পদ বাবা-মা ও ভাইয়ের নামে, আমার নামে কোনো সম্পদ নেই, আমার ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
যোগাযোগ করা হলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ফোন রিসিভ না করলেও লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হোসেন বলেন, নাজমুল অনেক সম্পদের মালিক কিনা জানি না, তবে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে আমাদের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত