গাজী মোহাম্মদ হানিফ, ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনীর দাগনভূঞায় ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আস্থা ফিরেছে রোগীদের। প্রতিদিন গড়ে বহিঃবিভাগে ৫শ থেকে ৬শ রোগী, আন্তঃবিভাগে ভর্তি, নরমাল ডেলিভারি ও সিজার অপারেশন, প্যাথলজিতে পরিক্ষা নিরিক্ষার পর্যাপ্ত চাহিদা, হাসপাতালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের আস্থা অর্জন করেছে। এদিকে রয়েছে চিকিৎসক ও জনবল সংকট। বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারিদের। সেবার মান অব্যাহত রাখতে জনবল ও চিকিৎসক বাড়ানোর দাবি সচেতনমহলের।
সরেজমিনে জানা যায়, করোনাকালীন থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা আরো আধুনিকায়ন, অবকাঠামোগত ভবন সংস্কার ও উন্নয়ন, রোগীদের সেকশন অনুযায়ী ভর্তি ও চিকিৎসক সেবা প্রদানে করা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। গত ২১ ডিসেম্বর ২০২১ইং তারিখে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি যোগদানের পর সিজার সেকশন নিয়মিতকরণ, ইমার্জেন্সি /জরুরি বিভাগকে সম্প্রসারণ যেখানে ৫ থেকে ৬ জন রোগী একই সময়ে জরুরি চিকিৎসা প্রদান, জরুরি বিভাগে হাইফ্লো অক্সিজেন সংযোগ স্থাপন এবং মুমূর্ষু হৃদরোগীদের প্রাথমিক সেবা প্রদান, সার্বক্ষণিক আইপিএস সুবিধাসহ জরুরি বিভাগকে সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমভাবে। রোগীদের সেবা বাধাঁগ্রস্ত না হয় সেজন্য আলাদা কক্ষে বিষ খাওয়া রোগীদের রুম করা হয়েছে। ভর্তিকৃত রোগীদের খাওয়ার মান বৃদ্ধিকরণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা (যদিও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারির পদগুলো শূণ্য), ওয়াশরুমে আলাদাভাবে গ্লাস ডোর (যা সবচেয়ে ভোগান্তির কারণ ছিলো) স্থাপন, নরমাল ও সিজার অপারেশন রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ প্যাকেজ আকারে দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের আঙ্গিনাকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন সৌন্দর্য বর্ধনকৃত ফুল ও বাহারি লতাপাতায় শোভা পায় এমন বৃক্ষ দিয়ে। সংরক্ষিত ঔষধের স্টোর রুমকে সাজানো ও এসি স্থাপনের পাশাপাশি তদারকির মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়ায় সরকারি সম্পদ যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে। এতে বিনামূল্যে সরবরাহকৃত ঔষধ পাচ্ছেন রোগীরা। এছাড়া বয়োবৃদ্ধ রোগীদের জন্য এনসিডি কর্ণার যেখানে অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে রক্তচাপ নির্ণয়, ডায়াবেটিস বই বিতরণ ও চিকিৎসা, নিয়মিত ফলোআপ সু্বিধা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ থেকেও রোগীরা আসেন চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালে। এম্বুলেন্স রাখা ও ড্রাইভার সার্বক্ষণিক থাকার জন্য আলাদা গ্যারেজ ও ভবন স্থাপন করা হয়েছে। ময়লার ভাগাড় ও হাসপাতালে ব্যবহৃত ময়লা আবর্জনা রাখার ডাষ্টবিন করা হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে।
হাসপাতাল তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসকের পদ ৩১ জনের মধ্যে খালি রয়েছে ১২ টি, শিশু কনসালটেন্ট ২ জনের মধ্যে ১জন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত। খালি পদগুলো বেশীরভাগই জুনিয়র কনসালটেন্ট রয়েছেন। কনসালটেন্ট শূন্যতা পূরণে বাড়তি চাপ নিয়ে প্রতিনিয়ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হয় কর্মরত চিকিৎসকদের। গত ২০২৩ সালে সিজার অপারেশন হয়েছে ৭৪ জন, নরমাল ডেলিভারি ৮২২ জন। চলতি বছর সিজার অপারেশন এ পর্যন্ত ৫৯ জন এবং নরমাল ডেলিভারি ৮৪৭ জন। শুধুমাত্র প্যাথলজিতে ২০২৩ সালে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬শ ১০ টাকা। আর ২০২৪ সাল অক্টোবর পর্যন্ত ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৪শ ২০ টাকা। এছাড়া বিভিন্নভাবে সরকারি খাতে রাজস্ব আয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত হাসপাতাল থেকে।
এ বছর সারাদেশের ন্যায় দাগনভূঞা উপজেলা ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য দিনরাত ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা ও জরুরি ঔষধ বিতরণের মাধ্যমে কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারসহ এ হাসপাতাল জনগনের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। বন্যায় উপজেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রে ৮৯৩২৪ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার প্রশাসনিক দক্ষতায় এ উপজেলা বেসরকারি হাসপাতাল, গ্রাম ডাক্তার, ঔষধ দোকান ও ভুয়া চিকিৎসক কিংবা অবৈধ রোগী দেখার বিষয়ে নিয়েছেন কঠোর পদক্ষেপ। যার কারনে সরকারি হাসপাতালে সেবা প্রদানে বাঁধাগ্রস্ত করেও ব্যর্থ হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে কারও বিপক্ষে হলে কেউ কেউ আবার বদলি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এমন গুঞ্জন ও চলছে এখন প্রকাশ্য। কমিউনিটি সেন্টারে নিয়মিত চিকিৎসকসহ একটা সঠিক নিয়মে জনগনের সেবা নিশ্চিত করনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কতৃপক্ষসহ সবাইর ভূমিকা প্রশংসনীয় এমন মন্তব্য আগত রোগী ও সর্বমহলের।
হাসপাতালে আসা রোগী নুর নাহার ও শাহ আলম জানান, প্যাথলজিতে পরীক্ষা নিরীক্ষার লোকজন ও যন্ত্রপাতি বাড়ানো উচিত। আমরা প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে এখানে অনেক কম খরচে বিভিন্ন টেষ্ট করতে পারি। সেবার মানে আমরা সন্তুষ্ট। এ সেবা যেন অব্যাহত থাকে। বাহিরে ২৩ শ টাকার পরীক্ষা সরকারিভাবে ৭/৮ শ টাকা এ সুবিধা যেন সবাই পান সে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে টিকা ও চিকিৎসা নিতে আসি। হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা দেখে অনেক ভালো লাগছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা তৌহিদুল ইসলাম জানান, অত্র হাসপাতালে যোগদান করার পর পূর্বের সেবা এবং বর্তমানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনগনের আস্থা ফিরেছে। যদিও অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝে লোকবল ও চিকিৎসক সংকট রয়েছে তারপরও হাসপাতালকে সেবার মান কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা রয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবা এবং তা নিশ্চিতকরণে আমার চেষ্টার ত্রুটি ছিলো না। যাদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে বিরূপ ধারণা রয়েছে তারা অন্তত একবার হলেও চিকিৎসা নিতে আসবেন। নতুনভাবে সংস্কার ও পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা আরো উন্নত হবে বলে জানান তিনি।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত