অসীম রায় (অশ্বিনী) বান্দরবান:
ছাতিম ফুলের মিষ্টি সুবাসে মুগ্ধ পথচারী এখন হেমন্তকাল, এই সময়ের জানান দেয় ছাতিম ফুলের তীব্র সুবাস। সকালে পুবের নরম রোদে ফুলগুলো চিকচিক করে আর হেমন্তের সন্ধ্যার বিবরণ পূর্ণাঙ্গ হয় না ছাতিম ফুলের এই তীব্র ঘ্রাণ ছাড়া। ছাতিম যেন হেমন্তেরই গায়ের ঘ্রাণ।
এটি হলো হেমন্তের দূত। ছাতিমের মতো তীব্র ঘ্রাণ আছে এমন ফুল খুব কম দেখেছি। রাতের বেলায় এর সুগন্ধ বহুদূর ছড়িয়ে পড়ে। ছাতিম পাতার একটি পত্রদন্ডে সাতটি করে পাতা থাকে। খুব দ্রুত বাড়ে এই গাছ। গাছ ভরে ফুল আসে। এর বীজের বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আছে। যেখানে বীজ পড়ে সেখানেই চারা জন্মায়। আমার ঘরের পাশেই ইয়া বড় ছাতিম গাছ। সন্ধ্যা নামতেই মনে হয় পুরো বাড়ি পারফিউম করে দিয়েছে কেউ।
বান্দরবান শহরের পৌরসভা ভবনের সামনের সড়কে কলেজের, বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, রাজবাড়ী,পুলিশ সুপার বাংলা, ডিসি বাংলা, সাবেক মেয়র ইসলাম বেবীর বাংলা, ফাতেমা রাণী চত্বরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ছাতিম গাছ ও তার ফুলের তীব্র ঘ্রাণই জানিয়ে দেয় হেমন্তের সরব উপস্থিতি। বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতের পুরো সময়টায় এ ঘ্রাণ ছড়ায়। সারা দিনের পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় প্রকৃতিতে বয়ে বেড়ানো হালকা বাতাসের সঙ্গে থেকে থেকে ভেসে আসে ছাতিম ফুলের এই মিষ্টি ঘ্রাণ। ফুলের সেই সুবাসে মুগ্ধ পথচারী।
হেমন্তকালে প্রকৃতিতে সাধারণত তেমন কোনো ফুল ফুটতে দেখা যায় না। প্রকৃতি যখন কিছুটা ফুলশূন্য হয়ে পরে তখন ফোটে ছাতিম। হেমন্তের গোধূলি লগ্ন থেকে রাত অবধি মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে প্রকৃতিকে মাতিয়ে রাখে এই ছাতিম। বাতাসে ছাতিমের সুবাস অন্য ধরনের মাদকতা ছড়ায় হৃদয়ে।
গ্রাম কিংবা শহরে সবজায়গায় দেখা মিলতো ছাতিম গাছের, কিন্তু এখন এটি অবাধ নিধনের শিকার। এখন আর সেভাবে দেখা মেলে না এ গাছের। তাই বলে ছাতিমকে দুর্লভ বলা যাবে না। সন্ধ্যার পর পথ চলতে চলতে হঠাৎ নাকে এসে লাগা বুনো সৌরভের ঝাপটা জানান দেয় এই গাছ ও তার ফুলের অস্তিত্ব। তবে দৃষ্টিসীমার চেয়ে খানিকটা উঁচু বলে সাধারণ অবস্থান থেকে গন্ধ বিলানো ছাতিমের ফুল সহজে চোখে পড়ে না। কিছুটা উঁচু জায়গায় উঠলে দেখা যায় গাছজুড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ হালকা ঘিয়ে রঙের ফুল। মনে হবে যেন কেউ অসংখ্য ফুলের স্তবক তৈরি করে রেখেছে।
, শুধু ফুলের সুবাসই নয়, ছাতিম গাছ দেখতেও সুন্দর। এর ওপরের দিকটা ছাতার মতো ছড়ানো। এই গাছ প্রায় ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একাধিক শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট গাছটির ছাল অসমতল ও ধূসর। এর পাতার ওপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর। ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা পাতা হয়। একই মূলাবর্তে চার থেকে সাতটি পর্যন্ত পাতা থাকে। বছরের এ সময়টায় সারা গাছ ভরে গুচ্ছবদ্ধ, তীব্রগন্ধি, হালকা ঘিয়ে রঙের ছোট ছোট ফুল ফোটে।
গাছটির সংস্কৃত নাম সপ্তপর্ণী। অঞ্চলভেদে একে ছাতিয়ান, ছাইত্যান, ছাতইনসহ নানা নামে ডাকা হয়। ছাতিমের নরম কাঠ থেকে ব্ল্যাকবোর্ড ও পেনসিল তৈরি হয় বলে। এ ছাড়া ছাতিম কাঠ দিয়ে কোথাও কোথাও কফিন বানানো হয়ে থাকে। গাছটি একসময় খুব দেখা গেলেও এখন তেমন একটা দেখা যায় না এটি পরিবেশের জন্য বেশ উপকারী, তাই আমাদের এই গাছকে সংরক্ষণ করা উচিত।
বান্দরবান রাজবাড়ী মোড় এলাকার বাসিন্দা উষাসিং রনি মারমা বলেন, আমাদের বাসা থেকে বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বাতাসে ভেসে আসা সুবাসে গাছ দুটিকে খুঁজে নেওয়া যায় খুব সহজেই। গাছ দুটি আমাদের বেশ প্রশান্তি দেয়। এক সময় গ্রামের রাস্তার পাশে, বনে-জঙ্গলে অহরহ এ গাছ থাকলেও বর্তমানে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রাকৃতিক সুগন্ধে ভরপুর সাতিম গাছ যাতে এলাকা থেকে বিলীন হয়ে না যায় সে ব্যাপারে সবাই সচেষ্ট হবে—এমন প্রত্যাশা করেন এলাকাবাসী।
আসুন ছাতিম রাজ্যে একবার উঁকি দিই। শরৎ ও হেমন্ত ঋতুতে গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে অফুরন্ত প্রস্ফুটন হয়ে সন্ধ্যার দিক থেকে ফুটতে শুরু করে তীব্র সুগন্ধ যুক্ত ছাতিম ফুল। ১হাজার মিটার দূর থেকে এর সুবাস আপনাকে জানিয়ে দেবে ধারে কাছে কোথাও ছাতিম ফুল ফুটেছে।
কারন প্রাচীন কালে পন্ডিতরা টোলে তাঁর ছাএদের পড়াতেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেত এই টোলগুলি ছিল এই গাছের তলায়।
সপ্তপরণী, কারন বেশিরভাগক্ষেত্রে দেখা যার একটি ডগায় সাতটি পাতা থাকে, তবে ৫/৮ টি পাতাও দেখা যায়।তাই এই গাছের আর এক নাম সপ্তপরণী।
ছাতিম, কারন ছাতিম মানে ছাতার সাথে যুক্তএকটি শব্দ। ডগার মাথায় পাতা গুলি এমন ভাবে সজ্জিত থাকে দেখলে মনে হয় ছাতার আকৃতি ধারন কররেছে।
গাছের কাঠ খুব নরম তাই এই কাঠ দিয়ে স্লেট, পেনসিল,ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি তৈরী করা হতো।
বাংলার গ্রাম অঞ্চলে যেমন কুসংস্কার আছে যে শেওড়া গাছে ভূত থাকে এটিও তেমনই একটি কুসংস্কার। শ্রীলঙ্কায় এই গাছের কাঠ দিয়ে মৃতদেহ বহন করার কফিন তৈরী করা হয়। ঐ একটা গা ছমছম ব্যাপার। তাছাড়া প্রাচীন কালে এই গাছ প্রচুর ছিল তাই এর নীচে গ্রামের বিচার সভাও হয়তো বসত এবং অপরাধীকে শাস্তি ও এমনকি মৃত্যুদন্ডের আদেশ ও হয়তো দেওয়াহতো। তাই এইরূপ নামাকরণ। তবে ধারনাগুলো সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর। যথোপযুক্ত কোনো প্রমান নেই।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত