আব্দুল মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ির গুইমারা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন মেধাবী শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম। তার এই সফলতার গল্প অনেক বেদনার! তার এই কৃতিত্বের পেছনে মা, চাচা,চাচী ও মামার পাশাপাশি রয়েছে প্রতিষ্ঠানের অবদান। শিক্ষকদের আন্তরিকতা আর মায়ের ভালোবাসায় পিতৃহীন মো. আশরাফুল ইসলাম আজ এগিয়েছে এতদূর! সকলের ভালোবাসা আর মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যেতে চান বহুদূর। হতে চান চিকিৎসক।
২০১০ সাল জীবনের কালোঅধ্যায় শুরু। ছয়, চার ও এক বছরের সন্তান রেখে মারা যান খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়া এলাকার মো. আব্দুল রাজ্জাক। দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা মা পেয়ারা বেগম! সন্তানদের নিয়ে মায়ের নীরব আহাজারি আর ভাবনায় সারথি হলেন, সন্তানদের চাচা,চাচী আর মামা! কিছুটা স্বস্তি পেলেন মা পেয়ারা বেগম। শপথ নিলেন সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার। আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতা আর নিজের ঘাম জড়ানো পরিশ্রমে গত ১৪ বছরে জ্যেষ্ঠ পুত্র রেদুয়ান ইসলামকে স্নাতকে( সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ১ম বর্ষ) পৌঁছাতে পেরেছেন। সেও গুইমারা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলেন। মেঝ পুত্র মো. আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় খেদাছড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে জিপিএ-৫ অর্জন ও ২০২৪ সালে গুইমারা সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-অর্জন। কনিষ্ঠ কন্যা মারজানা ইসলাম ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর ঘোষণায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মো. আশরাফুল ইসলামের সাফল্য জানতে চাইলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার এই সফলতার পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম ও কঠিন সংগ্রামের করুণ ইতিহাস। আমরা তিন ভাই, বোন। আমার বড় ভাই মো. রেদুয়ান ইসলাম, বর্তমানে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত। তিনিও গুইমারা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৫ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা পাস করেছেন। আমার ছোট বোন মারজানা ইসলাম বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। আমার বাবা ২০১০ সালে মৃত্যু বরণ করেন। সংসারে হাল ধরার মতো কেউ ছিল না। আমার বয়স তখন ৪ বছর, বড় ভাইয়ের বয়স ৬, আর ছোট বোনের বয়স ১ বছর। আমার মা ছিলেন সাহসী, তিনি আমাদের সকলকে আগলে রেখে শুরু করেন জীবন যুদ্ধ৷ আমার পরিবার বলতে গেলে কাকা, মামা আর আন্টির সহযোগিতায় কোন রকম দিন পার করেছি৷ ছোট থেকে পড়াশোনাটা নিজের মধ্যে আনার চেষ্টা করি৷ আমার মা নিজের পরিশ্রম, কষ্ট দিয়ে সব সময় পড়াশোনা আর ভালো কাজ করতে শিখিয়েছেন৷ বহু কষ্টে এসএসসিতে খেদাছড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছি। এতে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যায়৷ কলেজে পড়ার সময় দেড় বছর টিউশনি করি। নিজের খরচ নিজে বহন করি। আমার ভাই ও টিউশনি করিয়ে পড়াশোনা করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ পেয়েছে। বিশেষ করে গুইমারা সরকারি কলেজে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পাই৷ প্রাইভেট পড়ার মতো টাকা ছিল না৷ তাই কলেজে নিয়মিত ক্লাস করি। অনলাইনে ঘরে বসে ক্লাস করি। আলহামদুলিল্লাহ এই কষ্টের ফসল আজকের এই প্রপ্তি৷ মায়ের মনে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নপূরণে মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছেয় কোচিং করছি। মায়ের পরিশ্রম ও তাঁর মূখে একটু স্বস্তির হাসি ফোঁটাতে চিকিৎসক হতে সকলের দোয়া চাই।
কলেজ অধ্যক্ষ মো. নাজিম উদ্দীন বলেন, আশরাফুল ইসলাম ও তার বড় ভাই রেদুয়ান ইসলাম দু'জনই মেধাবী শিক্ষার্থী। উভয়ে আমার কলেজ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও পড়ালেখায় ওরা খুব মনোযোগী। মায়ের আগ্রহ ও পরিশ্রম ওরা আজ এগিয়ে যেতে পারছে। আল্লাহ ওদের ভবিষ্যৎ মঙ্গল করুক।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত