অসীম রায় (অশ্বিনী) বান্দরবান:
ক্ষণে ক্ষণে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্যি জানান দিচ্ছে, ঠাকুরঘরে উদ্ভাসিত মৃন্ময়ী রূপ প্রতিমা বরণ। চিন্ময়ী আনন্দরূপিণীর বোধন হয়ে- ছে গতকাল। শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব, শারদীয় দুর্গোৎসবের। আজ বুধবার মহাষষ্ঠী। পূর্বাহ্ণ ৮.০১-এর মধ্যে ষষ্টাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্টীবিহিত পূজা। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। আগামীকাল মহাসপ্তমী। মহাসপ্তমীর প্রভাতে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহিতপূজা। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাৎ ১৬টি উপাদানে দেবীর পূজা।
বুধবার সকালে মন্দিরে মন্দিরে দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা এবং সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গোৎসব উপলক্ষে বান্দরবানে বইছে আমেজ। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন । আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করেন ।
বুধবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাষষ্ঠীতে মায়ের চক্ষুদান সায়াংকালে কল্পারম্ভ, বোধন আমন্ত্রণ এবং অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠীপূজা সম্পন্ন হবে। সকাল থেকে মন্দির-মণ্ডপ চণ্ডিপাঠে মুখরিত হবে। বৃহস্পতিবার সকালে মহাসপ্তমী পূজা ।শুক্রবার সকালে মহা-অষ্টমী এবং পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধিপূজা শুরু হবে সকাল ৭টা ৪১ মিনিটে। শনিবার সকাল ৬টা ১২ মিনিটে নবমী পূজা শুরু হবে। পরদিন সকাল ৮টা ২৬ মিনিট দশমী পূজা শুরু। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের উৎসবের শেষ হবে।
পার্বত্য জেলা বান্দরবানে নানান জাতিগোষ্ঠীর আর সম্প্রদায়ের বসবাস এখানে। প্রত্যেক ধর্মের উৎসব পালন হয় ভিন্ন আমেজে। বিশেষ করে বড় ধর্মীয় উৎসব গুলোতে মিলন মেলা হয় সব সম্প্রদায়ের লোকের। এবারও দুর্গাপূজায় প্রচুর লোকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন সনাতনীরা ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ - জেলা শাখার সভাপতি বিপ্লব দাশ ( রাজেশর) জানান, সনাতন ধর্মালম্বীরা প্রতিবছরের মতো এবারও মায়ের আগমনের অপেক্ষায় আছেন। সবার মঙ্গল কামনায় এই দেশে সুখে শান্তিতে বসবাস করার প্রার্থনা করা হবে মায়ের কাছে। আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সোর্হাদ্যপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপনের প্রত্যাশা করেন ।
এ দিকে জেলা সদরে পূজামণ্ডপে গুলোর প্রস্তুতির কাজ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক,পুলিশ প্রশাসন সহ আনসার, বিজিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তারা পূজা উদযাপন কমিটির সাথে মতবিনিময়সহ পূজার সার্বিক প্রস্তুতি সর্ম্পকে খোঁজখবর নেন।
পূজামণ্ডপে পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন, বলেন, সুষ্ঠুভাবে পূজা আয়োজনে সব রকমের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা করে সংশ্লিষ্ট দফতর সমূহকে প্রয়োজনীয় দিক নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে, কাজ করছে মনিটরিং টিম। সম্প্রীতি বজায় রেখে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
৩১ টি পুজা মন্ডপে দূর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ১১, লামা ৮, আলীকদম ৫
রুমা ১, রোয়াংছড়ি ১, থানচি ২ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩ টি।
অপর দিকে বান্দরবান নবাগত পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার, পিপিএম (বার) জানান, বান্দরবানে শারদীয় এ দুর্গাপূজা যেন সবাই নিরাপদ ভাবে উদযাপন করতে পারে এ জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নয়টি উপজেলার ৬১ টি পূজামণ্ডপের মধ্যে ৩৪টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রশাসন ও সবার সহযোগিতায় এবারের পূজা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন এমনটাই প্রত্যাশা সনাতন ধর্মালম্বীদের।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত