প্রত্যন্ত জনপদে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চলছে হুন্ডির কারবার। বিদেশে পাচার হচ্ছে দেশের অর্থ। এতে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি ফরিদপুরেরচরভদ্রাসনে অনলাইনে জুয়া পরিচালনার অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক হওয়া কয়েকজন অনলাইন জুয়ারিদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ তথ্য। অবশ্য ওই চক্রের সাথে জড়িত আরো অনেকে এখনো অধরা।
পুলিশ বলছে, অনলাইনে জুয়া পরিচালনার সাথে জড়িত থাকায় আটকদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে থানায়। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের ব্যাপারটি তদন্তে বেরিয়ে এলে মানি লন্ডারিং আইনে তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হবে। চরভদ্রাসন থানার পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ৬ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে চরভদ্রাসনের লোহারটেক ব্রিজের ওপর বখাটেদের আড্ডায় আকস্মিক অভিযান চালিয়ে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মনিরকান্দি গ্রামের মাসুদ শেখ (৩৪) ও মনিরুজ্জামান মিঠু (৩৬)। মিঠুর বর্তমান ঠিকানা ফরিদপুরের গোয়ালচামট বলে পুলিশ জানায়। তবে আটকের পর তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় গোপন রেখে তাদেরকে স্থানীয় বখাটে বলে জানায় পুলিশ। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের কারো বাড়িই চরভদ্রাসন নয়। এরপর আরো অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারে তাদের জড়িত থাকার তথ্য। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, আটকরা প্রত্যেকে দু’টি করে মোবাইল ব্যবহার করেন। যেই মোবাইলে টাকা লেনদেন করা হতো সেটি বন্ধ রাখতেন লেনদেন শেষে। শুধুমাত্র টাকা লেনদেনের সময় সেটি চালু রাখা হতো।
পুলিশ এ ঘটনায় মাসুদ ও মিঠুকে গ্রেফতার দেখিয়ে আরো তিনজনসহ পাঁচজনকে আসামি করে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছে। ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মাহবুব (মিঠুর ভাই), রহমান ও রেজা। তাদের মধ্যে রহমানের ঠিকানা অজ্ঞাত দেখানো হয়। আটক এই আসামিদের বয়স ৩০ হতে ৩৫ বছরের মধ্যে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য মতে, মালয়েশিয়া কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার ঘটনায় আটকরা হুন্ডি কারবার করছেন। অনলাইনে জুয়া তাদের অতিরিক্ত আয়ের পথ। এই করোনাকালীন হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি লেনদেনের রেকর্ড রয়েছে তাদের। নাম প্রকাশে ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে যে আটকদের একজন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সামান্য এজেন্ট হয়েও এই হুন্ডির কারবার করে এক মাসেই সাড়ে তিন লাখ টাকার কমিশন কামিয়েছেন। এরই মধ্যে তার মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের হিসাব। এসবই বেরিয়ে আসবে তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখলে। এ সময়ের মধ্যেই বিপুল অর্থের মালিক হয়ে গেছেন তিনি। তিনি একটি প্রাইভেট কারও কিনেছেন। ওই গাড়িতে করেই তারা লোহারটেক ব্রিজের ওপরে গিয়েছিলেন ওই দিন।
ঢাকায় বাড়ি কেনার চেষ্টাও চালাচ্ছেন ওই হুন্ডি কারবারি। অথচ মাত্র এক বছর আগে তিনি একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট হন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ আওলাদ হোসেন জানান, আটকদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা অনলাইনে জুয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। ফরিদপুরের ৮ নম্বর আমলি আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে তাদেরকে। মামলার তদন্তে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড শুনানি হয়নি। আটকদের বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য তার জানা নেই বলেও জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। চরভদ্রাসন থানার ওসি বলেন, আটকরা মোবাইলে অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন প্রতারণার সাথে জড়িত। এ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। তবে আসামিদের মধ্যে রহমান ও রেজা এক সময় মালয়েশিয়া ছিলেন। তাদের মাধ্যমে এমন সিন্ডিকেট গড়ে ওঠা অসম্ভব নয়। মামলার তদন্তে বিষয়টি উঠে এলে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের আইনে নতুন করে মামলা হবে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত