ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি: পাশাপাশি দুইটি ঝর্ণা হতে অবিরাম ধারায় পানি ঝড়ছে। আশেপাশে আধা কি: মি: এলাকা হতে সেই পানির প্রবাহমান ধারা শুনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, স্বর্গের কোন অপ্সরী তাঁর নুপুরের রিনিঝিনি শব্দে মোহনীয় সুরে গান শুনিয়ে যাচ্ছেন। আশেপাশে কয়েক কি: মি: এলাকায় কোন বসতি নেই, আশে শুধু পাখির কিচির মিচির শব্দ।
বলছিলাম রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন এর সীতা পাহাড় এলাকার পাদদেশে অবস্থিত একটি ঝর্ণার কথা। যেটাকে স্থানীয় একজন কৃষক এনামুল বাচ্চু বলছেন জোড়া ঝর্ণা। কারন পাশাপাশি দুইটি ঝর্ণা আছে। যদিও এখনো পর্যটকদের কাছে এই ঝর্ণা পরিচিত লাভ করতে পারে নাই।
কৃষক এনামুল বাচ্চুর এই ঝর্ণার ছড়ার নীচে ফলের বাগান আছে। তিনি আরোও বলেন, আমি অনেক বছর ধরে সীতাঘাট সীতা দেবী মন্দিরে পাশে ফলের বাগান গড়ে তুলছি। মাঝে মাঝে পাহাড়ের ভিতর একা একা হেঁটে যায়। গিয়ে এখানে বেশ কয়েকটি ঝর্ণার দেখা পাই। তবে এটির কোন নাম নেই, পাশাপাশি দুইটি ঝর্ণা আছে বলে, তাঁকে আমি জোড়া ঝর্ণা বলছি। বাচ্চু আরোও বলেন, এই জোড়া ঝর্ণার বাম পাশে আরোও একটি ঝর্ণা আছে। যেখানে গত বছর পর্যটক এসেছিল। তবে জানতে পারলাম কাপ্তাই উপজেলা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক ঝুলন দত্তের নামে পর্যটন শিল্পের প্রসার ও প্রচারে অবদান রাখায় কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন এর পক্ষ হতে এই ঝর্ণার নাম রাখা হয়েছে ঝুলন ঝর্ণা।
এদিকে কাপ্তাইয়ের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার লক্ষ্যে কাপ্তাই উপজেলার শিলছড়িতে অবস্থিত বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র নিসর্গ রিভার ভ্যালি এন্ড পড হাউস কর্তৃপক্ষ গত বুধবার (১০ জুলাই) এবং আজ বৃহস্পতিবার ( ১১ জুলাই) দুই দিন এই কেন্দ্র হতে পর্যটকদের থাকা খাওয়া ফ্রি এবং সেই সাথে কাপ্তাইয়ের ঝর্ণাগুলোকে দেখার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁরই অংশ হিসাবে গতকাল বুধবার একদল পর্যটক এই জোড়া ঝর্ণা দেখতে যান। যাঁর নেতৃত্বে ছিলেন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ এর নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও নিসর্গ রিভার ভ্যালি এন্ড পড হাউস এর পরিচালক মো: নাছির উদ্দিন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম ওয়াদা ছিল কাপ্তাইকে একটি পর্যটন বান্ধব শহর হিসাবে গড়ে তোলা। তাই নিসর্গ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আমরা একদল পর্যটকদের নিয়ে কাপ্তাই উপজেলার আশেপাশে ঝর্ণাগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সম্পূর্ণ ফ্রি তে এদের থাকা খাওয়া এবং ঝর্ণা দেখার ব্যবস্থা করেছি। গত বুধবার আমি এই পর্যটক দল নিয়ে এই জোড়া ঝর্ণায় যাই। এটা আমার এখানে প্রথম আসা। সত্যিই এই ঝর্ণা দেখে আমার মন ভরে গেল। পাশাপাশি দুইটি ঝর্ণা হতে অবিরাম ধারায় পানি পড়ছে। একদম নির্জন কোলাহলমুক্ত পরিবেশে এসে সত্যিই আমরা মুগ্ধ। যদি এই ঝর্ণাকে আমরা পরিচয় করিয়ে দিতে পারি, তাহলে অনেক পর্যটক আসবেন এখানে। তিনি আরোও বলেন, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) এই পর্যটকদলকে নিয়ে আমরা ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর ফকির মুরং ও দেবতাছড়ি ঝর্ণা দেখতে গেলাম।
চট্টগ্রামের অক্সিজেন হতে আসা মহিলা ট্যুরিস্ট জেবা হুমাইরা বলেন, আমি নিসর্গ কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে প্রথমবার এই জোড়া ঝর্ণায় আসি। দুইটি ঝর্ণাতে বেশ পানি আছে। দেখে মনটা ভরে গেল। আসার সময় ছড়া, পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনে আরোও ভালো লেগেছে।
এই ঝর্ণা দেখতে আসা চট্টগ্রামের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী দীপ্র বড়ুয়া বলেন, আমি ভ্রমনপিপাসু মানুষ। প্রকৃতি আমার ভালো লাগে। তাই আজ( বুধবার) এই ঝর্ণা দেখতে এসে খুবই ভালো লেগেছে। একদম নির্জন পরিবেশে এই ঝর্ণার পানি প্রবাহ মনে করিয়া দেয়, তবলার কোন তালের সঙ্গে আমি আনমনে গান গাইছি।
ঝর্ণা দেখতে আসা কুমিল্লার রাহাত বলেন, পর্যটন শহর হিসাবে কাপ্তাই একটি অনিন্দ্য সুন্দর উপজেলা। শুনেছি এখানে অনেক ছোট বড় ঝর্ণা আছে। তবে আজকে এই ঝর্ণা দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে।
কিভাবে যাবেন এই জোড়া ঝর্ণায়:
চট্টগ্রাম - কাপ্তাই সড়কের শিলছড়ি নিসর্গ রিভার ভ্যালি এন্ড পড হাউস বা শিলছড়ি সীতাঘাট মন্দির ঘাট হতে বোট যোগে কর্ণফুলি নদীর ওপারে গিয়ে বাচ্চুর বাগানে গিয়ে প্রায় ১ কি: মি: ছড়া পাড় হয়ে এই জোড়া ঝর্ণায় পৌঁছানো যাবে। তবে আধা কি: মি: পথ পাড়ি দিলে আরোও একটি ঝর্ণার দেখা মিলবে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত