ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি: পরস্পরের বিরুদ্ধে নেই কোন কাঁদা ছোড়াছড়ি, নেই কোন অভিযোগ কিংবা পোস্টার ছিড়ে ফেলার মতো গুরুতর অপরাধ। বলতে গেলেই সহবস্থানে থেকে প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে দিনরাত প্রচার প্রচারনায় চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিত্র।
আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ এর নির্বাচন। এতে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। গত ২ মে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা ভোটারদের দোঁয়ারে দোঁয়ারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
গত বুধবার ( ৮ মে) এবং বৃহস্পতিবার( ৯ মে) এই প্রতিবেদক উপজেলার রাইখালী, ওয়াগ্গা এবং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে গিয়ে অর্ধ ডজন ভোটারদের সাথে কথা বলেছেন। এসময় তাঁরা
সকলেই বলেন কোন রকম সহিংসতা ছাড়া এই পর্যন্ত প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কথা হয়, রাইখালী বাজার নিবাসী কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার ভট্টাচার্য এবং রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তালুকদার এর সাথে। তাঁরা বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কোন রকম সহিংসতা ছাড়াই আজ পর্যন্ত প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আশা করবো, নির্বাচন দিন এবং নির্বাচন পরবর্তী এই পরিবেশ যেন ঠিক থাকে।
ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর সাফছড়ির বাসিন্দা দয়া তনচংগ্যা, কুকিমারার অংসুপ্রু মারমা, শিলছড়ির আবুল কাসেম, কেপিএম এর কয়লার ডিপুর বাসিন্দা বসুদেব মল্লিক এই প্রতিবেদককে বলেন, একটি উৎসবমুখর পরিবেশে কোন রকম সংঘাত ছাড়া প্রার্থীরা প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পর্যন্ত আমাদের চোখে কোন প্রকার সহিংসতা চোখে পড়ে নাই।
আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি সবসময় রাজনৈতিক সহবস্থানে বিশ্বাসী। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ যাকে ভোট দিবে তিনিই নির্বাচিত হবেন। এখানে জোড় করে কিংবা বল প্রয়োগ করে কাউকে ভোট দিতে বলা উচিত না।
ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী সুব্রত বিকাশ তনচংগ্যা( জটিল) বলেন, আমার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা আমার রাজনৈতিক সহকর্মী। আমরা একসাথে সবসময় রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। তাই আমরা একসাথে একটি শান্তিপূর্ণ সহিংসমুক্ত নির্বাচন জনগণকে উপহার দিব। এখানেই জনগণ সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন।
দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী মো: নাছির উদ্দিন বলেন, একটি শান্ত, অসাম্প্রদায়িক জনপদ হিসাবে কাপ্তাইয়ের সুনাম আছে। আমিও চাই একটি সুষ্ঠু, অবাধ, সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচন। তাই আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি না করে রাতদিন জনগণের কাছে ছুটে যাচ্ছি। এখানে জনগণ আমার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবেন।
টিয়া প্রতিক নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী সুইপ্রু মারমা, টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হাই খোকন এবং উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা সবসময় শান্তিতে বিশ্বাসী, এখানে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবেন তিনিই উপজেলা পরিষদ এর ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হবেন৷ দিনশেষেতো আমরা সবাই একসাথে চলবো।
ফুটবল প্রতীক নিয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নিচ্ছেন ফারহানা আহমেদ পপি এবং কলসি প্রতীক নিয়ে অংশ নিচ্ছেন অপর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিউটি হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই আমাদের। ভোটাররা যাকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁকেই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
কাপ্তাই থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, এই পর্যন্ত কোন রকম সহিংসতা ছাড়া প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য থানা পুলিশ সদস্যরা সবসময় মাঠে কাজ করছেন।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মহিউদ্দিন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এই পর্যন্ত কোন প্রার্থী কারো বিরুদ্ধে আমার কাছে কোন অভিযোগ করেন নাই। একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর।