সাইফুর রহমান পারভেজ, গোয়ালন্দ রাজবাড়ী:
২১ এপ্রিল সম্মুখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ দিবস-২০২৪ উপলক্ষে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ১৯৭১ সালে নিহত সকল শহীদের স্বরণে স্মৃতি চারণ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী।
রবিবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে উজানচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে গোয়ালন্দ সম্মুখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য চত্বরে ইন্জিনিয়ার শেখ জুয়েল বাহাদুরের বাড়ি সংলগ্নে ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যায় নিহত সকল শহীদের স্বরণে ভাস্কর্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতি চারণ ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল দিনটি ছিল বুধবার। ওই দিন কাকডাকা ভোরে মানিকগন্জের আরিচাঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরি বোঝাই করে পাকবাহিনী প্রথম এসে নামে পদ্মাপারের গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর কামারডাঙ্গি এলাকায়। সেখান থেকে বাহাদুরপুর এলাকায় এগিয়ে আসলে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনী হালকা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এ সময় হানাদারের বুলেটে প্রথম শহীদ হন আনছার কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিন। এছাড়াও শহীদ হন হাবিল শেখ ও ছবেদ আলী মন্ডল নামের আরো দুই ব্যাক্তি এবং গুলিবিদ্ধ হন বেশ কয়েকজন।
এরপর পাকবাহিনী পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙা গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে হানাদারের বুলেটে শহীদ হন ওই গ্রামের স্বাধীনতাকামী ২৪ জন নিরীহ নারী-পুরুষ। পরবর্তিতে পাক বাহিনী গোয়ালন্দ বাজারে প্রবেশ করে বাজারে ব্যাপক অগ্নিকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ২১ এপ্রিল স্মরনে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে শহীদ পরিবারগুলোর উদ্যোগে শহীদদের নামফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তারা নিহত ২২ জনকে শহীদী মর্যাদা দেয়ার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্জিনিয়ার শেখ জুয়েল বাহাদুর।
বক্তব্য রাখেন প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার বাকাউল আবুল হাসেম, যুদ্ধকালীন অপর কমান্ডার সিরাজ আহমেদ, গোয়ালন্দ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুস সামাদ মোল্লা প্রমূখ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম খান, উপজেলা যুব লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. ইউনুস মোল্লা, উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মৃধা প্রমূখ।
বক্তারা গোয়ালন্দের প্রতিরোধ যুদ্ধের এই গৌরবময় দিনটি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে সরকারী-বেসরকারীভাবে আরো বৃহৎ পরিসরে উদযাপন করার উপর গুরুত্তারোপ করেন। সেইসাথে এখানে নির্মানাধীন স্মৃতি ভাস্কর্যের অপূর্ণ কাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।