মাঠ পর্য়ায়ের বন কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা, দূর্নীতি ও অবৈধ অর্থলিপ্সার কারণে কর্ণফুলী রেঞ্জের ফ্রিখিয়ং বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে সেগুন, জারুল, আকাশমণি, জাম, চাপালিশ, গামারি, কড়ই ও গর্জনসহ নানা প্রজাতির শতশত ঘনফুট গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করছে পাচারকারী চক্র। অবৈধভাবে আহরিত কাঠ কর্ণফুলী নদী পথে বাঁশের চালীর আড়ালে এবং চিৎমরমের বিভিন্ন চোরাই রাস্তা হয়ে রাইখালীর ঢলুছড়ি-নারানগিরি কান্দো শ্রমিকের মাধ্যমে চন্দ্রঘোনা বন ও শুল্ক পরীক্ষণ ফাঁড়ি বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নদী পথে চোরাই কাঠ পাচার হচ্ছে।
স্থানীয় হেডম্যান-কার্বারীদের সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের কর্ণফুলী রেঞ্জের ফ্রিখিয়ং বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে শতশত কাঠুরিয়া অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে বিভিন্ন সাইজের গাছ নির্বিচারে কর্তন করে কাঠ পাচার করছে। কাঠ পাচারের সময় বন বিভাগ, আঞ্চলিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ ও ক্ষমতাসীনদের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
কলাবুনিয়া গ্রামের মোহন লাল চাকমা বলেন, স্থানীয় গ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী সংরক্ষিত বনের ওপর নির্ভরশীল। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন অজুহাতে সরকারী বনজ সম্পদ উজার করে। কর্ণফুলী রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রাচীনতম বড় বড় সেগুন গাছ রয়েছে। সশস্ত্র রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে দিনে রাতে সমান তালে সংরক্ষিত বাগানের গাছ কাটা হচ্ছে। এখানে কাঠ পাচারকারীদের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছে। চিৎমরম আগারপাড়া গ্রামের এক মারমা গ্রামবাসী বলেন, একাধিক চোরাই কাঠ পাচারকারীরা গাছ কাটার জন্য শতশত শ্রমিক নিয়োগ করে সরকারী বাগান উজার করে ন্যাড়া ভূমিতে পরিণত করেছে।
কর্তনকৃত গাছের গোড়া মুছে দিচ্ছে, যাতে বন বিভাগ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে ধরা না পড়ে সেগুন গাছের মোতা। প্রায় সময় বড় বড় সেগুন গাছের গোড়া উপড়ে ফেলে দেয়। বাগান থেকে গাছ কেটে টুকরো করে চিৎমরম, আগারপাড়া, কলাবুনিয়া সহ নিকটবর্তী পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে মজুদ করে। শতশত কান্দোপার্টি (শ্রমিক) দিয়ে পাহাড়ের চিকনরাস্তা হয়ে নারানগিরি-ঢলুছড়ি কর্ণফুলীনদী পাড়ের বিভিন্ন ষ্পটে মদুজ করে এসব কাঠ পাচার করে।
মরিয়মনগর গ্রামের মোহাম্মদ আরমান বলেন, পার্বত্যঞ্চলের বিভিন্ন বনায়ন থেকে আনা মূল্যবান কাঠ কর্ণফুলী নদী পথে পরিবহন করে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ষ্পটে মজুদ করে। রাতের আঁধারে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক পথে পোমরা বন চেক ষ্টেশনকে ম্যানেজ করে কাঠ পাচার চলছে।
চন্দ্রঘোনা এলাকার মো. সুরুজ মিয়া জানান, কর্ণফুলী নদী ও কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক পথে অবৈধ কাঠ পাচারের মহোৎসব চলছে। কতিপয় চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীদের সাথে মাঠ পর্যায়ের বনকর্মী-কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিনাবাধায় চলছে কাঠ পাচার। জুন, জুলাই ও আগষ্ট তিন মাস বাঁশ আহরন, পরিবহন, বিপনণে সরকারী ভাবে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু বন্ধ মৌসুমেও নদীপথে বাঁশ পাচার হচ্ছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের হাজার হাজার একর বনায়নকৃত বৃক্ষ শুণ্যে পরিণত হচ্ছে। চোরাইপথে মূল্যবান বনজ সম্পদ পাচার হওয়ায় সরকার বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
ফ্রিখিয়ং বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার ও চন্দ্রঘোনা বন ও শুল্ক পরীক্ষণ ফাঁড়ির ষ্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল নদী ও সড়ক পথে কাঠ পাচারের সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবী করেন।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত