এম রানা ( ঢাকা)
বিদ্রোহীদের কাছে এক এক করে ঘাঁটি হারাতে শুরু করেছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এর মধ্যেই সোনার খনির এলাকা হিসেবে পরিচিত হোমালিনের সেউই পি আয়ে শহর নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায় জান্তা। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সেই অভিযান বন্ধ করে দেয়।
এর আগে টানা লড়াইয়ের পর গত বছরের নভেম্বরে এই শহর চলে যায় পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফএস) হাতে। সংবাদমাধ্যম ইরাবতী বলছে, ৪০০ জান্তা সেনা এই শহর পুনরুদ্ধারের অভিযান চালায়। গত শনিবার তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। নিহত হয় অনেকে।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারিও এই শহর পুনর্দখলের চেষ্টা চালায় জান্তা। ওই সময় সরকারের পক্ষে থাকা স্থানীয় অনেক বাহিনী তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। কিন্তু তখনো দখলে নিতে পারেনি।
জান্তার আরও ঘাঁটি বিদ্রোহীদের দখলে, ৬২ সেনা নিহত জান্তার আরও ঘাঁটি বিদ্রোহীদের দখলে, ৬২ সেনা নিহত
এবারের মিশনে ফাইটার জেট ও এমআই–২ হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছে জান্তা। কিন্তু এর কঠোর জবাব দিয়েছে পিডিএফ। জান্তাকে ঘিরে ধরে বিদ্রোহীরা। পানি, খাবার ও অস্ত্রের যোগান বন্ধ করে দেয়। এতে মিশনের শক্তি কমে যায়। মারা যায় সাত সেনা।
তবে হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।
ক্রমেই জান্তা বাহিনীর ওপর চড়াও হচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা। গত তিনদিনে জান্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক সামরিক ঘাঁটি দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী। আর এ লড়াইয়ে নিহত হয়েছে ৬২ জান্তা সেনা। পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফস) ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর আক্রমণে দিশেহারা জান্তা সরকার।
গত তিনদিনে সাগাইং, মাগওয়ে ও মান্দালয় অঞ্চল ও কাচিন ও কারেন রাজ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংবাদমাধ্যম ইরাবতী বলছে, অনেক চেষ্টার পরও পিডিএফ বাহিনীর হাত থেকে সাগাইং শহর পুনর্দখলে নিতে পারেনি জান্তা বাহিনী।
বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্রমাগত চাপের মুখে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বিদ্রোহীদের কাছে উত্তর-পশ্চিমের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিন অং হ্লাইংয়ের জান্তা বাহিনী। পশ্চিম সীমান্তে আরাকান আর্মির হামলায় পিছু হটছে তারা।
তিন বছর আগে, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির দলকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় জান্তা বাহিনী। এরপর দেশটিতে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হয়েছে গণবিক্ষোভ ।
আর সম্প্রতি সামরিক বাহিনীকে হটিয়ে দেশটির বেশ কয়েকটি এলাকার দখল নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এছাড়া লড়াইয়ের মধ্যেই দেশটির সেনাবাহিনী ছেড়েছেন কয়েক হাজার সেনা। এতে অনেকটা বেকায়দায় আছে জান্তা সরকার।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ জোরালো করেছে আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী কয়েকটি গোষ্ঠী। আর এ কারণে আতঙ্ক বাড়ছে তমব্রু সীমান্তে। এ সংঘাতের কারণে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
এর মধ্যে সোমবার মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা একটি গোলার আঘাতে ঘুমধুম সীমান্তে একজন বাংলাদেশি ও একজন রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে কোণঠাসা হয়ে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১১৭ জন সদস্য এখন পর্যন্ত তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মধ্যে তাঁদের নিরস্ত্র করে হেফাজতে নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।
আতঙ্কের কারণে সীমান্তবর্তী বাজারগুলোর সব দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন স্থানীয়রা। অনেকেই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। যারা রয়ে গেছেন তারাও দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্ক নিয়ে।