মোঃ আরিফুল ইসলাম, মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি)
পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গাতে এগ্রো ওয়ান লিমিটেডের স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটো চাষ করে সফল হয়েছেন চাষি মো: আবু সাঈদ। পাহাড়ের বুক ছিড়ে ৪ একর পাহাড় জুড়ে উৎপাদিত টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। সীমান্ত ঘেঁষে পাহাড়ের বুকে যত দূর চোখ যায়, টমেটোর সমারোহ। সারি সারি গাছে সুতো আর বাঁশের কন্চিতে ঝুলছে লাল টকটকে টমেটো। দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে।
টমেটো চাষে সফল চাষি আবু সাঈদ জানান, তিনি ঢাকা থেকে পাহাড়ে ২০২২ সালে তার বন্ধুর আম বাগানে ঘুরতে এসে দেখেন যে পাহাড়ের মাটিতে কৃষির অপার সম্ভাবনা রয়েছে তার পর ২০ একর জায়গা লিজ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। ২০ একরের মধ্যে ৪ একর জায়গায় টমেটো চাষে ১৬ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, টমেটোর ফলন অনুযায়ী যদি মাঝারি দামেও বিক্রি করেন তাহলে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেন তিনি। বগুরা থেকে এগ্রো ওয়ান লিমিটেডের স্মার্ট-১২১৭ জাতের টমেটোর চারা নিয়ে এসে রোপনের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে এ-সব টমেটো বাজার জাত করা হচ্ছে।
আবু সাঈদ এর সাফল্য উদ্যোগী করেছে স্থানীয় অনেক চাষিকে। টমেটো তুলে ভালোভাবেই সংসার চলছে মজুরদের। টমেটো চাষকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক মানুষ বর্তমান সময়ে এই চাষের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বহু শ্রমজীবী পরিবার জীবন জীবিকার ক্ষেত্র হিসেবে টমেটো চাষের কাজে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
আমাদের দেশে নানান ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়। দেশে শীতকালীন সময় গুলোতে বহুবিধ সবজির উপস্থিতি দেখা যায়। আমাদের দেশে অতিপরিচিত এবং ভিটামিন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি হিসেবে টমেটোর গুনের শেষ নেই।
সারা বিশ্বে আলুর পরই টমেটো উৎপন্ন হয়, অধিকাংশ দেশেই টমেটো অন্যতম প্রধান সবজি। টমেটো কাঁচা-পাকা এবং রান্না করে খাওয়া হয়। প্রতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ টমেটো- সস, চাটনি, জুস ইত্যাদি তৈরিতে ব্যহৃত হয়। টমেটোর পুষ্টির পাশাপাশি ভেষজ মূল্যও আছে, এর শাঁস ও জুস হজম কারক এবং ক্ষুধা বর্ধক, রক্ত শোধক হিসেবে ও কাজ করে।
টমেটো একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। টমেটো বিশেষ করে সালাদ সবজি হিসেবেও বেশ পরিচিত ভিটামিন এ, ছভিটামিন সি সমৃদ্ধ টমেটোর গুনাগুনের শেষ নেই এই টমেটো রাতকানা রোগের মহাষৌধ হিসেবে কাজ করে। ভেসজ গুনাগুন সমৃদ্ধ টমেটোতে আছে আমিষ, শর্করা, খনিজ পদার্থ যা ক্যান্সার প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে।
আমাদের দেশে ইতিপূর্বে কম ফলনশীল এবং শীত মৌসুমে কেবল মাত্র টমেটো চাষ হলেও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি আর নতুন নতুন উদ্ভাবিত জাতের কল্যানে সারা বছরই টমেটো চাষ হচ্ছে এবং চাষীরা লাভবান হচ্ছে। এরি ধারাবাহিকতায় পাহাড়ের মাটিতে জৈব স্যার ব্যাবহার করে পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা চেয়ারম্যান এর চরে এ উদ্যোক্তা সুদৃশ্য এবং অধিকতর উৎপাদনশীল টমেটো বাগান করে অপার সৌন্দর্য বিকিরন করছে এবং ব্যাপক ফলন হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।
উৎপাদিত গুনাগুন সমৃদ্ধ এ-সব টমেটো প্রাকৃতিক ভাবে পাকানোর মাধ্যমে বাজারজাত করা হচ্ছে । যা মানব দেহের জন্য স্বাস্থ্যকর। টমেটো চাষে সফল উদ্যেক্তা মো: আবু সাইদ জানান টমেটো চাষের সাফল্য ধরে রাখতে হলে কৃষি বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারিভাবে কৃষি কাজে কৃষি অফিসের সহযোগিতা পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি তেমন কোনো বুদ্ধি পরামর্শ পাননি জানিয়ে বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সচেতন হতে হবে এবং যথাযথ দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে কৃষিকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাটিরাঙ্গাতে দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে টমেটো চাষ আর এই চাষ অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবে এমন প্রত্যাশা চাষের সাথে সংশ্লিষ্টদের।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত