মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, বান্দরবান
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে নিরাপত্তার কারণে সীমান্তের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রি রতন চাকমার আবেদনের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের কাছে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বন্ধ হওয়া বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত ঘেঁষে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মিয়ানমার জান্তা সরকার। সীমান্ত ঘেঁষে ওপারে কামানের গোলা নিক্ষেপের পাশাপাশি বিমান থেকে গোলা বর্ষণ করা হচ্ছে বলে সীমান্তবর্তী প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ঘেষে মিয়ানমার অংশে ৩ দিনে অর্ধশতাধিক মর্টার শেলের প্রকট শব্দে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর সীমান্ত পিলারের বাংলাদেশের অভ্যন্তর এসব গোলার আওয়াজে কেঁপে উঠেছে। আর এ কাঁপুনিতে আতঙ্কিত হচ্ছে সীমান্তবাসি।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ এ তথ্য নিশ্চিত করে তিনি বলেন, সোমবার আজ সকালে ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দারা
ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্রো বলেন, আমরা যারা এপারে বসবাস করছি সবাই আতঙ্কে আছি, কখন কোন সময় কি হয় জানি না। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে না যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।
গত ৮-১০ দিন থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর গোলাগুলি হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে কী কারণে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে তা এখনো জানা যায়নি।
মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কদিন ধরেই সীমান্ত এলাকায় ভারী অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলি এবং মোটরশেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে আগুনের ধোঁয়া। এর আগেও মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গোলা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ে।
উল্লেখ্য, মায়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার প্রভাব বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যেও এসে পড়েছে। এ অবস্থায় মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকার নির্দেশ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।
তিনি গতকাল (২৮ জানুয়ারি) বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধীন উখিয়ার পালংখালী বিওপি এবং নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বিওপি ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা এবং টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধীন হোয়াইক্যং বিওপি ও তৎসংলগ্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
তুমব্রু সীমান্তের স্থায়ী বাসিন্দা সংবাদ কর্মী মাহমুদুল হাসান বলেন, কিছু দিন ধরে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে, আমরা যারা স্থায়ী বাসিন্দা আছি, সবাই খুব আতঙ্কে রয়েছি। তবে সীমান্তে বসবাসকারী অনেকেই ভয়ে নিরাপদে চলে গেছেন। এর আগে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সারারাত গোলাগুলি হয়।
গত ২৩ জানুয়ারি সকাল থেকে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে ২ বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। যা থেকে গুলির খোসা এসে পড়ে এপারের কয়েকটি গ্রামে। সে সময় এ সব গ্রামের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান।