• বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
৪ দফা দাবিতে সচেতন নাগরিক সমাজ নেতৃবৃন্দের সমাবেশ বুধবার যষ্ঠী: কাপ্তাই উপজেলায় এই বছর ৮ টি পুজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে পর্যটক খরায় কাপ্তাই পর্যটন শিল্পে চলছে মন্দাভাব  রাজস্থলীতে ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে ৪টি পূজা মন্ডবে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু কাপ্তাই ব্যাটালিয়ন (৪১ বিজিবি) এর উদ্যোগে হেডম্যানদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত রাজস্থলী প্রেস ক্লাবের নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সাথে ইউএনও’র মতবিনিময় কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে  শারদীয় দুর্গোৎসব  এবং কবরস্থান সংস্কারে সহায়তা প্রদান বাঙ্গালহালিয়া বাজার পরিচালনা কমিটির শপথগ্রহণ ও পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত লংগদুতে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন বান্দরবানে ডেঙ্গু আতঙ্ক, বাড়ছে রোগীর সংখ্যা শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ  মানিকছড়িতে প্রবীণ পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যুতে শোক

রেলশুন্য হচ্ছে রেলের শহর গোয়ালন্দ

সাইফুর রহমান পারভেজ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)প্রতিনিধি / ২৫৬ জন পড়েছেন
প্রকাশিত : শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

সাইফুর রহমান পারভেজ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)প্রতিনিধি

রেলশূন্য হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের দেশের ঐতিহ্য বাহী রেলস্টেশন। ১৮৭১ সালে চালু হওয়া এই স্টেশন অনেক ইতিহাস আর সমৃদ্ধে ভরা।

একসময় ঢাকা, সিলেট, মাদারীপুর ও চাঁদপুরের মানুষ এখান দিয়ে কলকাতায় যেত। ভোরের ট্রেনের হুইসেলের সাথে কুলি মজুর ইলিশ মাছের পেটি তুলতো ট্রেনে। হোটেল গুলোতে ইলিশ মাছের ধোয়ার মানুষকে টানতো অবিরত। হাজারও মানুষের কোলাহলে মুখর থাকতো যে স্টেশন, সেখানে বর্তমানে নামমাত্র একটি ট্রেন চলাচল করছে।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ রেলওয়ের দু’টি স্টেশন। একটি গোয়ালন্দ বাজার, অপরটি গোয়ালন্দ ঘাট (দৌলতদিয়া)। জনবল সংকটে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে দু’টি আন্তঃনগর ট্রেনসহ আরো বেশ কয়েকটি ট্রেন নিয়ে চলছিল গোয়ালন্দঘাট রেলস্টেশন। একে একে দু’টি আন্তঃনগর প্রত্যাহারের পর থেকেই গোয়ালন্দঘাট রেলস্টেশন কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তরা, আবাসিক বোডিং, ছোট ছোট দোকানের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দূর্দিন শুরু হয়। এরপরও বেসরকারি ভাবে পরিচালিত একটি নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন ও একটি লোকাল ট্রেন দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল গোয়ালন্দঘাট স্টেশনের কার্যক্রম ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। এই দু’টি ট্রেনের মধ্যে থেকেও রেল কর্তৃপক্ষ ১ ডিসেম্বর থেকে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেনটি গোয়ালন্দঘাট স্টেশনের পরবর্তীতে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে যাতায়াত করছে। এই ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোয়ালন্দ ঘাটের শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসা বন্ধ হয়ে পুরাপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত পুরোপুরি সড়ক নির্ভর হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন আগেই বন্ধ হয়ে যায় পার্বতীপুরগামী শিলিগুড়ি নামে পরিচিত ৫১৩ নম্বরের লোকাল ট্রেনটি। এতেকরে ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দঘাট রেলস্টেশনটি এখন ট্রেন সংকটে ধুঁকছে।
গোয়ালন্দঘাট স্টেশন অফিস সূত্র জানা যায়, গোয়ালন্দঘাট-খুলনা-রাজশাহী রেলপথের গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনে স্টেশন মাস্টার পদে একজন, সহকারী স্টেশন মাস্টার একজন, পয়টসম্যান তিনজন এবং গেটম্যান (পাহারাদার) দু’জনসহ সব পদে প্রয়োজনীয় লোকবল ছিল। প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে বিভিন্ন ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করত হাজারো মানুষ। ধীরে ধীরে পদ শূন্য হয়ে রেলওয়ের ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার স্টেশনটি গত ৬ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সেই পথেই হাঁটছে গোয়ালন্দঘাট রেলস্টেশনটিও। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রত্যাহারের পাশাপাশি একটি লোকাল ট্রেন আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোয়ালন্দ ঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় প্রভাব পড়তে শুরু করে। রাজশাহী-গোয়ালন্দঘাট রুটে নিয়মিত চলাচল করত মধুমতি এক্সপ্রেস নামের আন্তঃনগর নামে একটি ট্রেন। মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোয়ালন্দঘাট স্টেশন থেকে প্রত্যাহার করে ফরিদপুরের ভাঙায় স্থানান্তর করা হয়। এর আগে খুলনা-গোয়ালন্দঘাট রুটে চলাচলকারী তিতুমীর এক্সপ্রেস নামের অপর একটি আন্তঃনগর ট্রেন প্রত্যাহার করে রাজশাহী-চিলাহাটি রুটে স্থানান্তর করা হয়। অন্যদিকে গোয়ালন্দঘাট-পার্বতীপুর রুটে নিয়মিত চলাচল করত শিলিগুড়ি নামে একটি লোকাল ট্রেন।

রেলওয়ের ৫১৩ নম্বর ওই লোকাল ট্রেনটি প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে বিভিন্ন মালপত্র পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণ দেখিয়ে ২০১২ সাল থেকে লোকাল ট্রেনটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দঘাট রেলওয়ে স্টেশনের হোটেল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান (৭০) বলেন, ‘আমি ৪০ বছর যাবত গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনে হোটেল ব্যবসা করে আসছি। একটা সময় খুব জাগজমক ব্যবসা ছিল। এখন স্টেশনে আগের তুলনায় লোক সমাগম নেই বললেই চলে। ব্যবসা বাণিজ্যও নাই। তার পরেও দু’টি ট্রেনের যাত্রীদের আশায় হোটেল খুলে বসে থাকতাম। অন্যান্য ট্রেনের মত মেইল ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের এখন হোটেল বন্ধ করে বেকার হয়ে বাড়ীতে বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় নই।

এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলার প্রবীণ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ মোল্লা জানান, ‘শিলিগুড়ি নামের লোকাল ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পার্বতীপুর থেকে গোয়ালন্দ ঘাট রেলপথ এলাকার বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। রেলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে সড়ক পথে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। এ রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত শতশত শ্রমিক কর্ম হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ছিলো মাত্র দু’টি ট্রেন তার মধ্যে আবার মেইল ট্রেনটিও বন্ধ হয়ে গেল। এতে গোয়ালন্দঘাট এলাকার শত শত মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এমনিতেই পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঘাটে আর আগের মতো লোকসমাগম নাই।

গোয়ালন্দঘাট স্টেশন মাস্টার আব্দুল জলিল বলন, এই স্টেশনে একটি নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন ও একটি (সাটেল) লোকাল ট্রেন চালু ছিল। গত ১ ডিসেম্বর থেকে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেনটি রুটে পরিবর্তন করে খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাট এর পরিবর্তে খুলনা-ঢাকা রুটে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল শুরু করেছে। এখন শুধু মাত্র সাটেল (লোকাল) ট্রেনটি এই রুটে চলাচল করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপ (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার মুঠোফোনে জানান, উন্নয়নের ফলে কালের বিবর্তনে অনেক সময় ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনের ঐতিহ্যের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, একসময় গোয়ালন্দ ঘাট ফেরির জন্য যানবাহনগুলোকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। দেখেন এখন কয়টা ফেরি চলে? যানবাহনের জন্য ফেরি বসে থাকে। এ সবই উন্নয়নের ফসল। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেল চালু হওয়ার ফলে গোয়ালন্দ ঘাটের পরিবর্তে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন ঢাকায় যাচ্ছে। এতে যাত্রীদেরও সময় এবং ভোগান্তি কমে গেছে। কোন রুট থেকে ট্রেন প্রত্যাহার করা হলো, ওই এলাকার মানুষ একটু ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক।’

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ