আব্দুল মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার (খাগড়াছড়ি)
কাসাভা বা শিমুল আলু সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে পাহাড়ে। খাগড়াছড়ির পানছড়ি, মাটিরাংগা, গুইমারা, রামগড়, মহালছড়ি, মানিকছড়ি ও দুর্গম লক্ষ্মীছড়ির উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর পতিত টিলায় কাসাভা চাষ হয়েছে। শুধু মানিকছড়ি উপজেলায় এবার কাসাভা চাষ হয়েছে ৪শত ৫২ হেক্টর জমিতে। এতে করে শ্রমজীবি বেকার নারী, পুরুষের নিয়মিত কাজের সুযোগে জনপদে বেকারত্ব কমছে। অন্যদিকে কাসাভার পাউডার থেকে আটা, চিপস, পশু খাদ্য তৈরির পাশাপাশি বস্ত্র ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে কাসাভার মাড় বা স্টাচ। এছাড়াও কাসাভার পাতা ও অবশিষ্ট অংশে হচ্ছে জৈব সার। মোট কথা দেশের অর্থনীতিতে কাসাভা অর্থকরী ফসল ও দরিদ্র মানুষের আয়ের উৎস হিসেবে ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পাহাড়ে প্রাণ ও রহমান নামের দুইটি কোম্পানী কাসাভা চাষে প্রান্তিক কৃষকের পাশে দাঁড়ালেও সরকার বা কৃষি বিভাগের সে রকম উদ্যোগ চোখ পড়েনি! ফলে কোম্পানির অগ্রিম পুঁজিতেই চাষাবাদ করতে গিয়ে লভ্যাংশের কিছু অংশ কোম্পানি হাতিয়ে নিচ্ছে! কারণ বীজ, সার, ওষধ ও পরিবহন সুবিধা কোম্পানি বহন করায় প্রকৃত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রান্তিক কৃষক! সরজমিন ও উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যে জানা গেছে, পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা ব্যতিত সব উপজেলায় কম-বেশি কাসাভা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মানিকছড়ি উপজেলায় তুলনামূলকভাবে বেশি। এখানো ৪৫২ হেক্টর পাহাড়,টিলার পতিত জমিতে সৃজিত কাসাভা বা স্থানীয় ভাষায় শিমুল আলু চাষ করছে দুইটি কোম্পানি । বিশেষ করে উপজেলার অজপাড়া গায়ের পতিত জমিতে কম পুঁজি বিনিয়োগ করে কাসাভা চাষের ফলে জমির মালিকেরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবানের পাশাপাশি শ্রমিকেরা নিয়মিত কাজের সুযোগ পাচ্ছে। নারী শ্রমিক দৈনিক সাড়ে ৩০০ টাকা ও পুরুষ শ্রমিকের দৈনিক মজুরী ৫০০ টাকা। রহমান কেমিক্যাল লিমিটেডের উপজেলা ফিল্ড সুপারভাইজার মো. রেজাউল করিম বলেন, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, গুইমারা, মাটিরাংগা উপজেলাও চাষিরা নিজ উদ্যোগে ছোট পরিসরে কাসাভা চাষাবাদ করেছে। আমরা চাষিদের (তাঁদের) বীজ, সার ও উৎপাদিত ফসল ফেক্টরীতে পৌঁছানো পর্যন্ত নানা বিষয়ে পরামর্শ ও সহায়তা(অর্থ) দিয়ে থাকি। চাষি বা কৃষক প্রতি টন কাসাভা ১০০০০ টাকায় বিক্রি করছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন চাষি সূত্রে জানা গেছে, জেলার মহালছড়ি, পানছড়িসহ অন্তত ৭ উপজেলায় এক হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে কাসাভা চাষ করেছে প্রাণ কোম্পানি লিমিটেড। নাম প্রকাশ না করার সূত্রে জনৈক চাষি জানান, প্রাণ কোম্পানি নতুন করে দীঘিনালা উপজেলাও কাসাভা আবাদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। স্থানীয় প্রাণী কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাঁদের প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি অজুহাত দেখিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি না হলেও এক,দুই উপজেলা ব্যতিত জেলার সকল উপজেলায় কাসাভা চাষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রতিনিয়ত স্থানীয়েরা পতিত পাহাড় ও টিলায় কাসাভা চাষ করে পতিত জমি আবাদে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের স্বপ্ন নিয়ে অনেকে কাসাভা চাষে এগিয়ে আসার বিষয়ে কোম্পানির প্রতিনিধিরা অকপটে স্বীকার করেন।
সেপ্টেম্বর-নভেম্বর এবং মার্চ-এপ্রিল মাসে দুই দফায় কাসাভা লাগানো যায়। এক একর জমি আবাদে ব্যয় ২০০০০ টাকা এবং আলু উত্তোলন ও ফেক্টরীতে পৌঁছা পর্যন্ত গাড়ীভাড়ায় ব্যয় আরও ২০০০০ টাকা। একর প্রতি ফলন উৎপাদন কমপক্ষে ৬মে.টন। প্রতি টন বিক্রি ১০০০০ টাকা। তাহলে একরে বিক্রি ৬০০০০ টাকা। ব্যয় বাদে একরে চাষির লাভ বা মুনাফা ২০০০০ টাকা।
পাহাড়ে বানিজ্যিক সকল উৎপাদনে সশস্ত্র কয়েকটি সংগঠনকে মোটা অংকের চাঁদা দেওয়ার অঘোষিত রীতি চলমান থাকায় সৃজিত বাগ,বাগান কিংবা উৎপাদিত ফসল বা জমির সঠিক পরিসংখ্যান বাগান মালিকেরা প্রকাশ করতে চায় না!
মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, কাসাভা আসলে অর্থকরী ফসল হলেও এটি এখনো সরকারি হিসেবে মূল্যায়িত হয়নি! ফলে সুস্বাদু ও অধিক লাভবানমূখী এই ফসলটির উৎপাদনের অন্তত ৬০ শতাংশ চাষ হয় তিন পার্বত্য জেলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাগড়াছড়ির নানাপ্রান্তে। োখাগড়াছড়ির সবচেয়ে বেশি ৪৫২ হেক্টর কাসাভা চাষ মানিকছড়ি উপজেলায় হওয়ায় আগামীতে এই জনপদকে কাসাভা রাজ্য ঘোষণা করার পরিকল্পনা কৃষি বিভাগের রয়েছে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত