মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান ব্যুরো প্রধানঃ
আলীকদম উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১৫ জন। তবে শিক্ষার্থীর তুলনায় বিদ্যালয়টিতে নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। আর সেই কারণে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে বা গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে। এক শিফটের স্কুল হওয়ায় পাঠদানের জন্য প্রাক-প্রাথমিক সহ ৬টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যালয়ে ব্যবহার যোগ্য শ্রেণীকক্ষ রয়েছে ৫টি। বাধ্য হয়ে পাশের হলরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে। উপজেলার সদরের একমাত্র মডেল স্কুলটির শ্রেণিকক্ষ সংকটের বিষয়টি কেউ মেনে নিতে পারছেনা। এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্কুলের অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটির সভাপতি সমর রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে পিডিবি-৪ এর আওতায় নতুন ভবন হওয়ার কথা বলে স্কুলের মূল ভবন ও সংযুক্ত টয়লেট ভেঙ্গে ফেলা হয়। সেই থেকে নানা জটিলতার কারণে প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত নতুন ভবন হয়নি। এছাড়া বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনের পানির লাইনে ছিদ্র থাকায় একটি শ্রেণীকক্ষ ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। উপজেলার প্রাণকেন্দ্রের একমাত্র মডেল স্কুলটির শ্রেণীকক্ষ সংকট, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া এই স্কুলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি আবাসিক ছাত্রাবাসটির ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাত্রাবাসে ৭৫ জন শিক্ষার্থী থাকে। যে কোন সময় ভবন ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শ্রেণিকক্ষ বর্ধিত করতে নতুন ভবন নির্মাণ ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের থাকা ছাত্রাবাসটি মেরামত বা নতুন ভবন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আপ্রুমং মার্মা বলেন, ১৯৬৫ সালে ২ একর ৫০ শতক জায়গা নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ভালো ফলাফল করে বিদ্যালয়টি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষায় সুনাম অর্জন করেছে। এই বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় পুরো উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলে-মেয়েরা এই স্কুলে পড়তে ভিড় জমায়। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে মানসম্মত পাঠদান করা যাচ্ছেনা। এতে করে স্কুলটি অর্জিত সুনাম হারাতে বসেছে।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ নুরুল হুদা ভূঁইয়া বলেন, স্কুলের পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা রয়েছে। মূল ভবনের সাথে একটি টয়লেট ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। এখন শতশত শিক্ষার্থী জন্য একটি টয়লেট যথেষ্ট নয়। যা আছে তাও জরাজীর্ণ। সংষ্কার জরুরি। এছাড়া স্কুলে পানির সমস্যা আছে। বর্তমান টিউবয়েল থেকে শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায়না। যে পানি পাওয়া যায়, তা পান করার উপযোগী নয়।
বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণিকক্ষ ও বসার পর্যাপ্ত টেবিল না থাকায় দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। আবার কোনো কোনো কক্ষে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ফলে তাদের পড়াশোনা ও শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে মনযোগের বিঘ্ন ঘটে। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দফতরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান ভাল। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্র সংকটে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিটি ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা একটু দেরিতে ক্লাসে গেলে বসার জায়গা পায়না। অনেকে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এ সমস্যা সমাধানে বিদ্যালয়টিতে দ্রুত একটি নতুন ভবন বরাদ্দ প্রয়োজন।
সরজমিনে স্কুলে গেলে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে টমটম স্টেশন করা হয়েছে। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। বিগত সময়ে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটলেও এ সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসেনি। স্কুলের রেকর্ড মতে ২ একর ৫০ শতক জায়গা থাকলেও কিছু জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। স্কুলের বেশকিছু বেঞ্চ জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অনুপাতে আসবাবপত্র অপ্রতুল।
আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মংক্যনু মার্মা বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। এইসব সমস্যা সমাধানে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার আলীকদমে বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার আসার কথা রয়েছে। আমি সমস্যা গুলো নিয়ে কথা বলব।’
এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইব বলেন, ‘নতুন ভবন করার বিষয়ে এলজিইডি আলীকদম এর সাথে কয়েকবার কথা হয়েছে। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ পূর্বক শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত