মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান (বান্দরবান)
লামার সরই ইউনিয়নের হাছনাভিটা এলাকার বাসিন্দা মোঃ শফিকুর রহমান। নিজের ও স্ত্রী সন্তানের এলার্জির সমস্যা নিয়ে রবিবার সকালে এসেছেন লামা উপজেলার ‘সরই ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে’ চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এসে দেখেন হাসপাতালের গেইট বন্ধ, কেই নেই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দারোয়ান পরিচয়ে সামনে আসলেন মোঃ শামসুল হক। সেবাপ্রার্থী (রোগী) শফিকুর রহমান বলেন, ডাক্তার আছেন কিনা, জানতে চাইলে দারোয়ান বলেন আগামী বৃহস্পতিবার ডাক্তার আসতে পারে, তখন আসবেন। একইভাবে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা শতাধিক শিশু-নারী-পুরুষ রোগী চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন এই হাসপাতাল থেকে। এই চিত্র নিত্যদিনের।
২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী শনিবার পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার সরই ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো জনবল নিয়োগ হয়নি। ফলে জনবল মঞ্জুরি না পাওয়ায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি এই এলাকায় অর্ধলক্ষ মানুষের চিকিৎসাসেবায় কোনো উপকারে আসছে না। হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর থেকে সিকিউরিটি গার্ড শামসুল হক হাসপাতালের অবকাঠামো পাহারা দিচ্ছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর লামার মেডিকেল অফিসার ডাঃ বাপ্পী মার্মা বলেন, আমরা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিকে সাব সেন্টার দেখিয়ে কিছু ঔষধপত্র দিয়ে সপ্তাহ এক-দুইদিন একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকের অফিসারের মাধ্যমে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। যা এলাকার চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমান ১০ শয্যা কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকের অফিসার রেজাউল করিম প্রশিক্ষণে থাকায় সরই এফডব্লিউসি এর উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকের অফিসার প্রশান্ত কুমার ধরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কল্যাণ কেন্দ্রটিতে জনবল নিয়োগ দিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বান্দরবানের উপ-পরিচালক স্যার অধিদপ্তরে অনেকবার লেখালেখি করেছেন। জনবল নিয়োগ না দেয়ায় ঔষধ ও সরঞ্জাম বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, একটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ২ জন মেডিকেল অফিসার, ২ জন ফ্যামেলি মেটারনিটি এটেনডেন্ট (এফএমএ), ৩ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন অফিস সহকারী, ১ জন অফিস সহায়ক, ২ জন নাইটগার্ড এর নূন্যতম পোস্ট রয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন জনবল নিয়োগ না দেয়ায় হাসপাতালের আসবাবপত্র ও অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৪ কোটি ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যা হাসপাতালটি নির্মিত হয়। কাজের মধ্যে রয়েছে ১০ শয্যা হাসপাতাল ভবন, একটি স্টাফ কোয়ার্টার ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ। বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য ৪৫ শতক জমি দান করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ২০১৭ সালের ২৫ মে হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী উদ্বোধন করেন।
সরই ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস জানান, গজালিয়া, আজিজনগর ও সরই ইউনিয়নের লক্ষাধিক জনসাধারণের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ১০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি নির্মাণ করে। হাসপাতালের অবকাঠামো উদ্বোধন হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি জনবল। হাসপাতালটি পাহাড়ি ও বাঙ্গালী জনসাধারণের কোনো উপকারে আসছে না।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার প্রশান্ত কুমার ধর জানান, সপ্তাহে শনি ও বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। কিন্তু সেবাপ্রার্থীরা রোগীরা বলেন, সপ্তাহে একদিন বা কখনো কখনো মাসের পর মাস হাসপাতালটি বন্ধ থাকে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বান্দরবানের উপ-পরিচালক দীপক কুমার সাহা বলেন, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম কোন রকম সচল রাখা হয়েছে। জনবলের পদ মঞ্জুরি না পাওয়ায় জেলা পরিষদ জনবল নিয়োগ দিতে পারছেনা। সারাদেশের ১৪৭টি মা ও শিশু হাসপাতালের পদ মঞ্জুরি পেলেও দুর্ভাগ্যবশত সরই ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালের পদ মঞ্জুরি হয়নি। কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্ন পদে মঞ্জুরির বিষয়ে অধিদপ্তরে পত্র চালাচালি করা হচ্ছে।