মাসুদ রানা (ঢাকা)
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লৌহকপাট’-এর মতো দেশাত্মবোধক গানের সুর বিকৃতিকাণ্ডে গত কয়েকদিন ধরেই হইচই ঢাকা-কলকাতায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি ‘পিপ্পা’ ছবির এই গানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে দুই বাংলার সংগীতশিল্পী তথা গানপ্রেমীরা। এবার চাপের মুখে অবশেষে ক্ষমা চেয়েছে সংশ্লিষ্টরা। অনেকটা যেন দায়সারাভাবে ক্ষমা চেয়েই বিতর্ককে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে প্রযোজনা সংস্থা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রযোজনা সংস্থা রয় কাপুর ফিল্মসের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। প্রযোজনা সংস্থার দাবি, কপিরাইট সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মবিধি মেনেই কাজ করা হয়েছে, অনুমতি নিয়েই এই গান রিমেক করেছেন তাঁরা। নজরুল ইসলামের উত্তরসূরীরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ‘পিপ্পা’ টিমের সঙ্গে। সংস্থাটি জানায়, প্রয়াত কল্যাণী কাজী (নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ) তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করেন, তার সাক্ষী অনির্বাণ কাজী। জানানো হয়, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা অপরিবর্তিত রেখে নতুন সুর দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেখানে।
বিবৃতিতে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, ‘কাজী নজরুল ইসলামের আসল সুরের প্রতি আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত জগত, সমাজ ও রাজনীতিতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীনতা, শান্তি ও ন্যায়ের জন্য যাঁরা সংগ্রাম করেছিলেন, তাঁদের কুর্নিশ জানাতেই এই অ্যালবাম তৈরি হয়েছে।’
তাঁরা আরও জানায়, ‘আমরা প্রয়াত কল্যাণী কাজীর কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম এই গানের কথা ও স্পিরিট অক্ষুন্ন রেখে বিশ্বস্তভাবে সেটি নির্মাণ করার। তার চুক্তিও হয়েছিল। সই করেছিলেন প্রয়াত কল্যাণী কাজী, সাক্ষী ছিলেন অনির্বাণ কাজী (কল্যাণী দেবীর ছেলে)।
এদিকে, নজরুল ইসলামের সুরারোপিত গানের প্রতি বাংলাভাষী মানুষের যে আত্মিক টান রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়ে প্রযোজনা সংস্থার বক্তব্য, কারও ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকলে তাঁরা ক্ষমাপ্রার্থী। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অরিজিনাল কম্পোজিশনের প্রতি দর্শকদের যে আত্মিক টান রয়েছে সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি,তবে শিল্প সর্বদাই ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার বিষয়। তবে আমাদের কাজ যদি কারও ভাবাবেগে আঘাত দেয় কিংবা কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে তাহলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’
উল্লেখ্য, অনির্বাণ কাজী আগেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন চুক্তি করেই তাঁর মা এই গান ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। তবে গান অবিকৃত রাখার কথা জানিয়েছিলেন নির্মাতারা। এমনকি গান রেকর্ড করার পর কল্যাণী দেবীকে তা শোনানোরও কথা ছিল। এরইমধ্যে গত মে মাসে কল্যাণী দেবীর মৃত্যুর পর এই বিষয়টি আর মাথায় ছিল না অনির্বাণের।
এভাবে বিতর্কের মাঝে ক্ষমা চাইলেও পরোক্ষভাবে কাজী নজরুলের পরিবারের ওপরই দায় চাপালেন ‘পিপ্পা’র নির্মাতরা। অনুমতি নিয়েই গান রিমেক করা হয়েছে, সাফ দাবি করছেন তাঁরা।