মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, (বান্দরবান)
বিদ্যালয় ছুঁটির পর নীরব নিস্তব্ধ হয়ে উঠে বিদ্যালয় এলাকা। কাজ শেষে সবাই বাড়ি ফিরে যায়। চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসলে এসুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠছে মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীরা। সন্ধ্যা নামলেই বিদ্যালয় মাঠে, বারান্দায় ও অনেকসময় তালা ভেঙ্গে ক্লাস রুমের মধ্যেও বসে জুয়া ও মাদক সেবনের আসর। বান্দরবানের লামা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ‘লাইনঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ বিষয়ে এমনি অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সাজেদা ইয়াছমিন বলেন দুইএকদিন পরপরই ক্লাস রুমের তালা পাল্টাতে হয়। কারা যেন ভেঙ্গে ফেলে। বিদ্যালয় এলাকা নিরিবিলি হওয়ায় স্কুল ছুঁটির পর থেকে বখাটের আস্তানায় পরিণত স্কুল প্রাঙ্গন। রাস্তার পাশে স্কুল হওয়ায় এই উৎপাত বেশি। মাঝেমধ্যে ছোটখাট চুরির ঘটনাও ঘটে। নিরাপত্তা ও কোমলমতি শিশুদের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে সীমানা প্রাচীর জরুরি। এছাড়া বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় ক্লাস রুমের সংকট রয়েছে। এইসব কারণে অভিভাবকরা তাদের কোমলমতি সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
সরজমিনে লাইনঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে দুটি ভবন রয়েছে। এরমধ্যে একটি ভবন পরিত্যক্ত। পরিত্যক্ত ভবন আর টয়লেটগুলোর সেফটিক ট্যাংকের আশপাশে স্কফ সিরাপের খালি বোতল, সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি পড়ে আছে। পাশাপাশি মাদক সেবনকারীদের বসার জন্য খড় বিছানো রয়েছে বিদ্যালয়ের পিছনে। স্থানীয়রা জানায়, বিদ্যালয় ছুটির পর সন্ধ্যা নামলেই এ বিদ্যালয়ের চারদিক মাদক কারবারিদের দখলে চলে যায়। তারা রাতভর মাদক সেবন ও বিক্রি কার্যক্রম করে। স্থানীয়রা তাদের কাছে অসহায়। মাদকসেবী ও বখাটেদের এমন তান্ডব অস্বস্তিকর। তারা মাদক সেবনের পর গভীর রাতে আশপাশের বাড়িতে ঢুকে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।
শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার জানায়, প্রায়সময় ক্লাসের টেবিল ও বেঞ্চে খালি বোতল ও সিগারেটের সুকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে খুবই খারাপ লাগে। অভিভাবক মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, মাঝেমধ্যে আমরা স্কুলের দিকে আসলে কাউকে দেখলে সরিয়ে দেই। মাদকাসক্তদের কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। স্কুলের নিরাপত্তার জন্য বাউন্ডারি ওয়াল খুবই প্রয়োজন।
লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও এলজিইডি লামার সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টি স্কুলে সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় এমনি সমস্যায় পড়েছে লামা উপজেলার আরো ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওইসব স্কুলের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু নোমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, এটা অনাকাঙ্খিত বিষয়। ছুঁটির পর অনেক বিদ্যালয়ের পরিবেশটা নিরিবিলি হয়ে যায়। বিষয়টি এর আগে কেউ জানাননি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এলজিইডি লামার সাখে কথা বলে যেসব স্কুলে এখনো সীমানা প্রাচীর হয়নি, সেখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম শেখ বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির লোকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব বিদ্যালয় এমন সমস্যা আছে ওখানে মাঝেমধ্যে আমাদের পুলিশি টহল দেয়া হবে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত