সারাদেশের ন্যায় পাহাড়ী জনপদ খাগড়াছড়িতে স্বাড়ম্বরে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। আর একদিন বাদেই মন্ডপে মন্ডপে বেজে উঠবে উৎসবের সুর। মৃৎ শিল্পীদের হাতের নিঁপূণ ছোঁয়ায় দেবী দূর্গার বিমূর্ত অবয়ব ফুটে উঠেছে মন্ডপে মন্ডপে। এদিকে প্রস্তুতির শেষ মুহুর্তে প্রতিমাগুলোকে রাঙাতে শিল্পীদের যেন ব্যস্ততার শেষ নেই। জেলার প্রতিটি মন্ডপেই চলছে শেষ সময়ের ব্যস্ততা। চলছে সাজানো-গোছানোর কাজও।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশপাশি দুর্গোৎসব পালনে পিছিয়ে নেই ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর দুর্গাপুজা আয়োজন পাহাড়ে উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।
ওড়নার বদলে ‘রিসা’ আর শাড়ির বদলে ‘রিনাই’ দিয়ে সাজানো হয়েছে দশরথী দুর্গাকে। পায়ে নুপুরের পরিবর্তে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী ‘বেংকি’ ব্যবহার করা হয়েছে। মালা হিসেবে গলায় পরানো হয়েছে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী ‘রাংবতাং’ (পয়সা দিয়ে তৈরি বিশেষ মালা) আর হাতে চুড়ির বদলে ‘বাংডিবাই’ ব্যবহার করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে সারাদেশ থেকে ব্যতিক্রমী আয়োজনে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খাগড়াপুর শ্রী শ্রী অখন্ড মন্ডলী মন্দির ও ব্যাঙমারা পুজা মন্ডপে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে দশরথী দুর্গা দেবীর। সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, লক্ষীসহ সব প্রতিমাকে সাজানো হয়েছে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কার ও পোশাকে।
খাগড়াপুর অখন্ড মন্ডলি মন্দির ও ব্যাঙমারা পুজা মন্ডপে মঞ্চসাজে রয়েছে পাহাড়ের রূপ। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দূর্গা মাকে দেখে উল্লসিত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন। দূর্গোৎসবকে সামনে রেখে শিশু-কিশোর কিশোরীরাও উল্লসিত। উৎসবের আমেজ ছোট-বড় সবার মধ্যে।
ব্যাঙমারা পুজা মন্ডপের সভাপতি ও ইউপি সদস্য সুমন ত্রিপুরা বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো দুর্গোৎসব আয়োজন করছি। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দেবী দুর্গাসহ সব প্রতিমাকে সাজিয়েছি।
খাগড়াপুর অখন্ড মন্ডলি পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক চামেলি ত্রিপুরা জানান, ত্রিপুরা নারীদের ঐতিহ্যেবাহী সাজে দূর্গা মাকে সাজিয়েছে। দূর্গা মা যেহেতু নারী তাই এমন চিন্তা থেকেই রিনাই-রিসা দিয়ে সাজানো হয়েছে। ত্রিপুরাদের ঐতিহ্য মাচাং ঘরে তৈরী করা হয়েছে দুর্গা মন্ডপ।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হিরন জয় ত্রিপুরা বলেন, মা দুর্গার বিভিন্ন নামের একটি হচ্ছে ‘পার্বতী’। সে নামের সঙ্গে মিল রেখেই পাহাড়, ঝর্ণা, গাছ সবমিলিয়ে প্রকৃতির অবয়ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। দুর্গাপুজা মন্ডপে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ঐতিহ্যের স্বাধ পাবে।
খাগড়াছড়ি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক তরুন কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, এ বছর খাগড়াছড়ির নয়টি উপজেলায় ৬০টি মন্ডপে স্বাড়ম্বরে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তারমধ্যে খাগড়াছড়িতে ২০টি, পানছড়িতে ১০টি, মাটিরাঙ্গায় ৮টি, দীঘিনালায় ৮টি, মহালছড়ি ২টি, মানিকছড়িতে ৪টি, রামগড়ে ২টি, গুইমারায় ৪টি ও লক্ষীছড়িতে ১টি মন্ডপে দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড়ো এই উৎসবে মহানন্দে শামিল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শহর ছাপিয়ে গ্রামেও ছড়িয়েছে আড়ম্বর আমেজ।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা পূজা মন্ডপে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে বিভিন্ন পয়েন্টে। দুর্গাপুজাকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো কমতি থাকবেনা।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত