সেবা নিতে ভূমি অফিসে গিয়ে পদে পদে দুর্ভোগের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিস। ভূমি অফিসকে ঘিরে দালালের দৌরাত্ম ও নাগরিকদের খরচ কমাতে জনগণের দোরগোড়ায় ভূমি সেবা পৌঁছে দিতে এখানে শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ ভূমি সেবা কার্যক্রম। খাগড়াছড়িতে প্রথমবারের মতো সৃজনশীল এই উদ্যোগ নিয়েছেন মাটিরাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন।
সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে পুরো অফিস নিয়ে হাজির থাকবেন এসি ল্যান্ড। এই কার্যক্রমে নামজারি আবেদন, নামজারী শুনানি, খতিয়ান সংগ্রহ, জমাবন্দি নকল ও ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দেওয়াসহ ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান বা পরামর্শ দেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন।
শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালের দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চত্বরে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভ্রাম্যমাণ ভূমি সেবা কার্যক্রমটির উদ্বোধন করেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেজী চক্রবর্তী।
এ সময় মাটিরাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শরীফ, মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবাস চাকমা, মাটিরাঙ্গার একাডেমিক সুপারভাইজার মো. শরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎ, মাটিরাঙ্গা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী মো. সলিম উল্যাহ, মাটিরাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হাসেম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপজেলা ফিল্ড সুপারভাইজার মো. আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘মাটির কাছে মানুষের কাছে’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মাটিরাঙ্গায় শুরু হওয়া ভ্রাম্যমান ভূমি সেবা কার্যক্রম খাগড়াছড়ি তথা চট্টগ্রাম বিভাগে এটিই প্রথম। এদিনই মাটিরাঙ্গার সীমান্তবর্তী তাইন্দং ও তবলছড়ি ইউনিয়নের চারটি মৌজায় ভ্রাম্যমান ভুমি সেবা প্রদান করেন সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন।
ভ্রাম্যমান ভুমি সেবা প্রদান কার্যক্রমের প্রথম দিনেই দুইটি নামজারি শুনানি হয়। পাঁচ জনকে সৃজিত খতিয়ান ও চারজনকে জমাবন্দির নকল প্রদান করা হয়। এ ছাড়া চারটি মৌজায় জমি সংক্রান্ত নানা সমস্যার পরামর্শ নিতে জড়ো হয়েছিলেন দুই শতাধিক মানুষ। তাঁদের সমস্যা শুনে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভ্রমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন।
ভ্রাম্যমাণ ভূমিসেবা উদ্যোগটি এরই মধ্যে প্রান্তি পর্যায়ে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। সেবা নিতে আসা মফিজুল ইসলাম বলেন, আগে আমরা সেবার জন্য অফিসে গিয়ে ঘুরতাম। এখন ভূমি অফিসই মানুষের কাছে এসেছে। ভ্রাম্যমান ভুমি সেবা কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে সেবা নিতে আসা আব্দুল করিম বলেন, এ কাজের ফলে আমাদের অর্থ ও সময় দুই-ই বাঁচবে। দালালের খপ্পরে পড়তে হবে না।
ভ্রাম্যমান ভূমি সেবার ফলে ভূমি সংক্রান্ত কাজের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে জানিয়ে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. পেয়ার আহাম্মদ মজুমদার বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করেন তারা। মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসের এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সুবাস চাকমা এ সেবাটি চলমান রাখার জন্য অভিমত ব্যক্ত করেন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেজী চক্রবর্তী বলেন, পাহাড়ের দূর্গমতার কারনে যাতায়াতে কিছু জটিলতা হয় সেজন্য মাটির সেবা মানুষের কাছে দিতে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। সাপ্তাহের একদিন হলেও জনগণের দোড় গোড়ায় গিয়ে ভূমি অফিস ভ্রাম্যমান সেবা প্রদান করবে। ভ্রাম্যমাণ ভূমি সেবা কার্যক্রম চালু করার এই ইনোভেটিভ আইডিয়া গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে সাধুবাদ জানান তিনি।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে ভ্রাম্যমান ভূমি সেবা একটি ব্যাতিক্রমী উদ্যেগ মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূমি সেবা প্রাপ্তিতে অনেক ভোগান্তি রয়েছে। দীর্ঘদিনের এ ভোগান্তি নিরসনে এরকম উদ্যোগ সুবজ পাহাড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
২০৩০ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে স্মার্ট ভুমি সেবা নিশ্চিত করতেই এমন উদ্যোগ জানিয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ভ্রাম্যমান ভূমি সেবার মধ্য দিয়ে সবুজ পাহাড়ে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। তিনি বলেন, দালালের দৌরাত্ম ও নাগরিকদের খরচ কমাতে জনগণের দোরগোড়ায় ভূমিসেবা পৌঁছে দিতে এই ভ্রাম্যমাণ ভূমি সেবাটি চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা দিবে ভ্রাম্যমাণ ভূমি সেবা টীম।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত