মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান (বান্দরবান)
পাহাড় জুড়ে ছেঁয়ে গেছে সবুজের ভরা সোনালী জুমের ধান। এই ধানই বলে দিচ্ছে নবান্নের উৎসবের আগমন ঘটতে চলেছে। তাই প্রতিটি পাহাড়ে এখন পাঁকা ধানের সুবাস। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরদের প্রধান উৎস জুম চাষ। জুম চাষ পাহাড়িদের আদি পেশা। জুমের পাকা ধানের চাল দিয়ে চলে সারা বছরের খাদ্য।
বান্দরবানের মোট ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী ১১টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের প্রায় সকলেই জুম চাষ করে থাকেন। ধান ছাড়াও জুমে বাহারি সবজির চাষ, হলুদ, মারফা, মরিচ ,ভুট্টা ও তিলসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ করা হয়। ইতোমধ্যে পাহাড়ের জুমের ধান পেঁকেছে। উপযুক্ত হয়েছে বিভিন্ন রকমারি ফসল। তাই প্রতিটি পাহাড়ের ধুম পড়েছে জুমের ধান কাটার উৎসব। তবে ভারী বর্ষনের কারণের ধ্বসে গেছে জুমের পাহাড়। যার ফলে ধান ভালো হলেও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে জুমিয়ারা।
জুম চাষীরা জানিয়েছেন, এবারে জেলা ভারী বৃষ্টিপাত হওয়াই জুমের ধান পাহাড়ের পানির ঢলে ভেসে গেছে। অনেক স্থানে চাষ করা জুম পাহাড় ধ্বসে পড়ে গেছে। ভিজা মাটি ভিতরে বিভিন্ন বীজ গুলো পচেঁ গেছে। এখনো জুমের ধান মাটিতে শুয়ে গেছে। সেসব ধান মাটি সাথে মিশে নষ্ট হয়ে গেছে। জুমের ধান ভালো হলেও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে জুমিয়ারা।
বান্দরবান কৃষি বিভাগ তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৮ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে জুমের ধান আবাদ হয়েছিল। এতে উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২০ হাজার ২শত মেট্রিকটন। চলতি ২৩-২৪ বছরে ৭ হাজার ৯শত ৩৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৮৭ মেট্রিকটন। যা গত বছরে তুলনায় এবার ২ মেট্রিকটন ফলন কম হয়েছে। তাছাড়া জেলায় ভারী বৃষ্টিরপাতের কারনের কিছু কিছু স্থানে জুম পাহাড় ধ্বসের ফলে ফলন কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
লামা গজালিয়া এলাকার বটতলী পাড়া জুম চাষি হ্লাথোয়াচিং মারমা বলেন, জুমের এবার পাঁচ আড়ি ধান লাগানো হয়েছে। এখন পেকে তা কাটতে শুরু করেছি। ভারী বৃষ্টি কারনের জুমের সব ধান মাটিতে পড়ে গেছে। ধান ভালো হলেও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।
একই এলাকার জুম চাষি মংনাৎ মারমা বলেন, সকাল থেকে নারী-পুরুষ মিলে ধান কাটার শুরু হয়েছে। গতবছরে তুলনায় এই বছর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি স্থানে ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
সরেজমিনে লামার ফাইতং ইউনিয়নের মিনঝিরি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে নারী-পুরুষ দলবেধে জুমে ধান কাটছে জুমিয়ারা। আবার কেউ জুম ঘরে সেই ধানকে মাড়াই করছেন পা দিয়ে। সেসব ধানকে আবার পাখা সাহায্যে ধান উপযোগী করা হচ্ছে। তবে কয়েকটি জুমে ভারী বৃষ্টির পানিতে জুমে ধান পড়ে গেছে আবার কোথাও কয়েকটি স্থানেও পচে গেছে। শুধু ধান নয় ভুট্টা, মারফা, তিলসহ এবারে তেমন ভালো ফলন হয়নি। তবুও সব কিছু মিলে ভালো ফলন আশা করছেন জুমিয়ারা।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক এম,এম শাহনেওয়াজ বলেন, এপ্রিল মাসে শুরু দিকে জুমিয়ারা যেসব জুমে বীজ বপন করতে পেরেছে সেসব ধান ভালো হয়েছে। এপ্রিল শেষের দিকে যারা বীজ বপন করেছে সেসব জুমের ধান কিছু বিলম্ব হতে পারে। কারণ ভারী বর্ষনের কারণে কয়েকটি জুমের ধান ভেঙ্গে গেছে নয়ত নষ্ট হয়ে গেছে।
আরো বলেন, প্রতিটি পাহাড়ের এখন জুমের ধান কাটার শুরু হয়েছে। ৮০শতাংশ স্থানীয় জাতের আবাদ করা ধানগুলো অনেক স্থানে কর্তন শুরু করেছে। তাছাড়া ফলন তেমন খারাপ হয় নাই। যেহেতু জুমের ফসল নিমজ্জিত হয় নাই। তাই জুমের ফলন মোটামুটি ঠিক রয়েছে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত