ডিএমপির শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদের অফিস কক্ষেই নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বেদম প্রহারের ঘটনাটি ঘটেছিল। ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বেদম প্রহার করেন ডিএমপির রমনা জোনের সদ্য প্রত্যাহার হওয়া এডিসি হারুন অর রশীদ। ওসি নূর মোহাম্মদ তার নিজের রুমে থাকলেও নির্মম নির্যাতনের সময় তিনি নীরব ছিলেন। এমনকি বিষয়টি তিনি পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদেরও অবহিত করেননি।
থানার ভেতরে নির্যাতনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে শাহবাগের ওসি নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে? না-কি তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে বহাল তবিয়তে থানার দায়িত্বে থাকবেন?
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঊধ্বর্তন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত শেষ করার পর কার কী দোষ ছিল বের করবে। এরপর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনই ওসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
শনিবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় এরইমধ্যে ডিএমপির রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে তাকে পিওএমে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করেছেন ডিএমপি কমিশনার।
নারীঘটিত একটি ব্যাপার নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে থানায় ধরে আনেন এডিসি হারুন। শাহবাগ থানার ভেতরে তাদের নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। হারুনের নির্যাতনে ছাত্রলীগের এক নেতার সাতটি দাঁত ভেঙে যায়। ঘটনার পর তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগীরা হলেন—কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম।
থানা হেফাজতে মর্মান্তিক ওই ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে ছাত্রলীগ। দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠনটির বর্তমান ও সাবেক নেতারা এই ঘটনায় এডিসি হারুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, এডিসি হারুন শনিবার বিকালে ৩৩তম বিসিএসের এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী পরিচয় দেওয়া ৩১তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান।
একপর্যায়ে সেখানে এডিসি হারুনের সঙ্গে ওই কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তখন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ এডিসি হারুনের সঙ্গে ছিলেন।
এরইমধ্যে এডিসিকে বদলি করা হলো। ঘটনার সময় ওসি ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং ঘটনাটি তার রুমেই ঘটে। ফলে শাহবাগের ওসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আপাতত তার (ওসি) বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এডিসিকেই শুধু বদলি করা হয়েছে। এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অপরদিকে ঢাকা মেডিকেলে কর্মরত সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, কোন ঘটনা সম্পর্কে শাহবাগ থানার ওসিকে সরকারি মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন না। তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে ক্ষুদ্ধ মেডিকেল সাংবাদিকরা।