খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি অর্থয়ানে নির্মিত হলেও হতদরিদ্রদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ঘরের জন্য ‘নিজের লোকের’ মাধ্যমে মহালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল এই অর্থ নিয়েছেন। তিনি মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি । খোদ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প এমন অভিযোগে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২য় পর্যায়ে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মহালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের গৃহনির্মাণ কাজ চলছে। সরকারি অর্থায়ন ইউনিয়নে ৭৫ টি গৃহ নির্মাণ কাজের বাস্তবায়ন করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তবে অভিযোগ রয়েছে গৃহহীনদের ঘর দিতে নিয়ম বর্হিভূতভাবে অর্থ আদায় করেছে ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল। অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। বেআইনীভাবে অর্থ আদায় ছাড়াও নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে গৃহনির্মানের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মহালছড়ি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের চৌংড়াছড়ি হডম্যান পাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর বরাদ্দ পায় ৮০ বছর বয়সী পাইয়াপ্রু মারমা। তার স্বজন অংসু মারমা অভিযোগ করেন বলেন, এখানে ঘর বরাদ্দ পেতে হলে ইউনিয়ন পরিষদে ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। চেয়ারম্যান রতন শীলের লোক আছে তাদের কাছে টাকা জমা দেওয়ার পর ঘরটা আসে। পাইয়াপ্রু মারমা’র ভাই ঘরের জন্য ‘খুশি হয়ে’ ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছে বলে জানান।
তবে টাকা দেওয়ার পর গৃহহীনদের ঘর নির্মানে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহালছড়ির চৌংড়াছড়ি এলাকায় ঘুরে দেখে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ইউনিয়নের বাসিন্দা মংসাই মারমা অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় যারা গরীব তারা ঘর পাচ্ছে না। যারা টাকা দিতে পারছে তারা ঘর পাচ্ছে। একেকটি ঘরের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে ঘর পাচ্ছে না। এসব টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান। অভিযোগের ভিডিও রের্কডও এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
চৌংড়াছড়ি এলাকার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী আব্দুল কাইয়ুমও এই প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছেন। তবে নির্মাণ কাজ নিয়ে তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন পুরো ঘরে লিনটার দেয়া হয়েছে অথচ আমার ঘরে দেয়া হয়েছে কাটা লিনটার। ঘরের নির্মাণ কাজে মাত্র ২৯ বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছ। এতে কম সিমেন্ট দিয়ে ঘর হয়? নিম্নমানের কাজ নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করে সমাধান পাইনি।’
কোথাও কোথাও ঘরের বারান্দায় থাকা পিলারে হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই ভেঙে পড়ছেন।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান রতন কুমা শীল জানান, সামনে ইউপি নির্বাচন তাই আমার ক্লিন ইমেজ ধ্বংস করার জন্য অনেকেই চক্রান্ত করেছে। ঘর নির্মাণের জন্য কারো কাছে অর্থ আদায় করা হয়নি। কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এছাড়া তিনি বলেন, যদি কাজের মান খারাপ হয়ে থাকে তাহলে একশত ভাগ ভালো করে দেয়া হবে।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোবাইদা আক্তার জানান, আমি একমাস আগে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে। এর আগে নির্মাণাধীন ঘরের অনুমোদন করা হয়। ঘরের জন্য কেউ টাকা নিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত