লামা বন বিভাগের আওতাধীন ‘বমু রিজার্ভ ফরেস্টের’ ৬ একর জায়গা ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে। বমু রিজার্ভ ফরেস্টের অহিদ্দারঘোনা এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৬ একর সমতল জায়গা ৭০ লাখ টাকায় তার ভগ্নিপতি মোঃ নুরুল হোছাইন থেকে ক্রয় করেছেন বলে জানিয়েছে বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ মিজান।
বমু ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা অঞ্জন কান্তি বিশ্বাস বলেন, সংরক্ষিত বা রক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গা ক্রয় বিক্রয়ের সুযোগ নেই। কেউ করে থাকলে তারা অবশ্যই অপরাধ করেছেন। ১৯২৭ সালের বন আইন মতে সংরক্ষিত অথবা ৪ ও ৬ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞাপিত বনে বন কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতিরেকে অনধিকার প্রবেশ করাও অপরাধ। বন আইনের ২৭ ধারার ২ উপধারার (ছ) অনুচ্ছেদ মতে বনের ক্ষতিসাধন করা ব্যক্তিকে আদালত ক্ষতিপূরণ প্রদানের অতিরিক্ত দুই বৎসর ও অনধিক দশ বৎসর কারাদন্ড এবং অন্যূন বিশ হাজার টাকা ও অনধিক দুই লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
জানা যায়, ২৫ এপ্রিল ১৯৩১ সালে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের তত্ত¡াবধানে বমু রিজার্ভ ফরেস্ট সৃজিত হয়। ২০০৫ সালে বমু রিজার্ভ লামা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সংরক্ষিত ও রক্ষিত মিলে এই রিজার্ভের মোট আয়তন ২০১৯.৭৮ একর। বিভিন্ন মূল্যবান গাছের মাদার ট্রি’র জন্য বমু রিজার্ভ বিখ্যাত। এখানে শতবর্ষী গর্জন, তেশল, চাপালিশ, বয়েরা ও রং গামারী গাছ আছে। এছাড়া ২৫০ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে মূল্যবান আগর বাগান।
অহিদ্দারঘোনা এলাকায় সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, ইউপি মেম্বার রিজার্ভের ক্রয় করা জায়গাটি ভিলেজার আবুল কাসেম এর ভাই ছৈয়দ আলম ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। ছৈয়দ আলম বলেন, ২০১৩ সালে আর্থিক সংকটে পড়লে মেম্বারের বোন জামাই প্রবাসী মোঃ নুরুল হোছাইন এর কাছে সাময়িক দখল হস্তান্তর করি। দখল হস্তান্তর দলীলের কথা বলে মোঃ নুরুল হোছাইন খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। যা পরে নোটারি পাবলিক দ্বারা রেজিষ্ট্রি করে ছাপ বিক্রি দলীল সৃজন করে। দখল ফিরে পেতে বমু বিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যানের আদালতে বিচার দিই। গ্রাম্য আদালতে বন্ধকের টাকা নিয়ে জমি ফেরত দেয়ার কথা সিদ্ধান্ত হলেও মিজান মেম্বার তা মানতে রাজিনা। মিজান বলে এই জমি সে তার ভগ্নিপতি মোঃ নুরুল হোছাইন থেকে ৭০ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছে।
এই বিষয়ে ইউপি মেম্বার মোঃ মিজান বলেন, আমি ৬ একর জায়গা আমার ভগ্নিপতি মোঃ নুরুল হোছাইন থেকে ৭০ লাখ টাকায় ক্রয় করেছি। আমার কাছে ক্রয়ের দলীল আছে। রিজার্ভ ফরেস্টের জায়গা ক্রয়-বিক্রয় হয় কিনা ? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বন বিভাগকে আমি ম্যানেজ করব।
বমু বিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল কাদের বলেন, মিজান মেম্বার এই জায়গা তার বোন জামাই মোঃ নুরুল হোছাইন থেকে ক্রয় করেছে বলে জানিয়েছে। বন বিভাগের জায়গা কিভাবে ক্রয় করল আমি জানিনা।
লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল বলেন, রিজার্ভের জায়গা বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে বন বিভাগের টিম পাঠানো হয়েছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গা কোনভাবে হস্তান্তরের সুযোগ নেই। এই জায়গা বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। তথ্য প্রমাণ পেলে ক্রেতা বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত