দৈনন্দিন জীবনের নাগরিক যান্ত্রিকতা আর কোলাহল থেকে সাময়িক বিরতি নিতে একদিনেই ঘুরে আসা যায় বাংলার ‘হারানো নগরী’ হিসেবে খ্যাত পানাম নগর থেকে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সান্নিধ্য পেতে ঢাকার অদূরে পরিবারের সবাই মিলে আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম ৪৫০ বছরের পুরনো বাংলার প্রথম রাজধানীতে। যার প্রতিটি স্থাপনায় খচিত রয়েছে শত বছরের গল্প, ইতিহাস আর ঐতিহ্য।
ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড ২০০৬ সালে ঐতিহাসিক নগরের যে তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে ১০০ নগরের নামের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে পানাম নগর।
ঢাকার খুব কাছেই, মাত্র ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নারায়ণগঞ্জের খুব কাছে সোনারগাঁওতে চারদিকে পঙ্খীরাজ খাল দিয়ে ঘেরা পানাম নগরী। পূর্বে রয়েছে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা। এ নদীপথেই বিলেত থেকে এখানে আসত বিলাতি নানা ধরনের থান কাপড় আর দেশ থেকে যেত মসলিন। রমরমা ছিল এই মসলিন ব্যবসা। তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইউরোপিয়ানদের অনুপ্রেরণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে ওঠে পানাম নগর। তবে পরবর্তিতে এই বাণিজ্যের স্থান দখল করে নেয় নীল বাণিজ্য। কয়েক শতাব্দী পুরোনো বেশ কয়েকটি এখানে ভবন আছে এখানে। এ ভবনগুলো বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। ঈসা খাঁ ১৫ শতকে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনাগাঁওয়ে। তখনকার পানাম নগর, খাস নগর আর বড় নগর প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল।
আমরা শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে বাসে উঠি। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাই আমাদের গন্তব্যে। সোনারগাঁওয়ের ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠে এই পানাম নগরী। ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, এখানে ১৪০০ শতাব্দীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় পৃথিবীর নামি-দামি শিক্ষকরা যেখানে পড়াতেন। এ নগরীর উত্তরদিকে ৩১টি আর দক্ষিণদিকে ২১টি, মোট ৫২টি ঔপনিবেশিক আমলের স্থাপনা আছে। এ স্থাপনাগুলোর স্থাপত্যশিল্পে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সঙ্গে মোঘল রীতির একটা দারুণ মিশ্রণ দেখা যায়।
পানাম নগরের আশপাশে ঘুরলে দেখা যায়, ছোট সর্দার বাড়ি, ঈশা খাঁর তোরণ, নীলকুঠি, বণিক বসতি, ঠাকুর বাড়ি, পানাম নগর সেতুর মত ঐতিহাসিক আরও কিছু স্থাপনা।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে পানাম নগর যেতে গুলিস্তান থেকে মোরগাপাড়া চৌরাস্তার উদ্দেশে বাসে উঠতে হবে। স্বদেশ বা বোরাকের এসি পরিবহনে ভাড়া নিতে পারে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। শুক্রবার হলে সময় লাগতে পারে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। আর অন্যদিন হলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। মোরগাপাড়া চৌরাস্তায় নামলে পানাম নগরীতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশা পাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা। এ ছাড়া গুলিস্তান থেকে চিটাগাং রোডের বাসে করে চিটাগাং রোডে গিয়ে সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে করে যেতে পারেন পানাম নগরে। আবার বাসে গেলে নামতে হবে পানাম নগর বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে রিকশায় পৌঁছে যান সোনারগাঁও জাদুঘর।
টিকিট:
পানাম সিটিতে প্রবেশে টিকিটমূল্য ২০ টাকা। আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি টিকিট ২০০ টাকা। আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাইরের দেশের নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি টিকিটের দাম ৩০০ টাকা। তবে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য একদম ফ্রি। আর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পানাম নগরে প্রবেশ করতে পারবে জনপ্রতি ১০ টাকা করে টিকিটি কিনে। আর সোনারগাঁও জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে জাদুঘর।
থাকার ব্যবস্থা:
ঢাকার আশপাশে থাকলে তো একদিনেই ঘুরে আসা যায় পানাম নগর থেকে। তবে ঢাকার বাইরে থেকে আসলে সোনারগাঁওয়ে থাকার জন্য ভালো থাকার হোটেল রয়েছে।
হোটেল মেহেরান – নারায়ণগঞ্জ
হোটেল সোনালী – নারায়ণগঞ্জ
হোটেল সুগন্ধা – নারায়ণগঞ্জ
সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট – সোনারগাঁও