বন্যার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে মাথাগোঁজার একমাত্র মাটির ঘরটি ডুবে যায়। রাতের আধাঁরে পানি দেখে ৪ সন্তানকে নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ির পাশে উচুঁ রাস্তা আশ্রয় নিই। ঘর থেকে বের হতে না হতেই, পানিতে ভিজে মাটির ঘরটি হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কোন মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কোনমতে জান নিয়ে বেঁচে আছি। দুইদিন পর পানি কমলে কাঁদামাটির নিচ থেকে নষ্ট মালামাল উদ্ধার করি। ২০ বছরের সাজানো সংসার একমুহুর্তে ধ্বংস হয়ে গেল। এত পানি জীবনে কখনো দেখিনি।’ সাংবাদিক দেখে মুখ শাড়ির আচঁলে ঢেকে এইভাবেই কষ্ট গুলো বলছিল দিনমজুর মোঃ জাহাঙ্গীর এর স্ত্রী জুলেখা বেগম (৩৫)।
জানা যায়, গত ৬ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৪দিন স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ডুবেছিল লামাবাসী। চার দিনের বন্যায় সবচেয়ে বেশি পানি হয় ৭ আগস্ট সোমবার রাতে। সেইরাতে বান্দরবান জেলার লামা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কুড়ালিয়া টেক গ্রামে দিনমজুর মোঃ জাহাঙ্গীর মাটির ঘরটি বানের পানিতে ডুবে ধসে পড়ে। শুধু জাহাঙ্গীর নয় কুড়ালিয়া টেক গ্রামে আবু কালাম, আব্দুল মন্নান সহ আরো ২৫ জনের মাটির ঘর একইভাবে বানের পানিতে ডুবে ধসে যায়। ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আহমদ জানান, তার ওয়ার্ডে লামামুখ, কলিঙ্গাবিল, রাজবাড়ি, পশ্চিম রাজবাড়ি, চোরারবিল গ্রামে কমপক্ষে ২শত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
জাহাঙ্গীর এর বাড়ির পাশে আব্দুল মন্নান এর মাটির ঘরটিও একইভাবে পানিতে ডুবে ধসে যায়। মন্নানের স্ত্রী কুলছুমা বেগম বলেন, আমার এক মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। তার বই গুলো পর্যন্ত বাঁচাতে পারিনি। গত কয়েকদিন ধরে মানুষের ঘরে রাত কাটাচ্ছি। ৬ সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো ? কিভাবে এই ঘর মেরামত করব ?
লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম রবিবার বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সাথে বন্যা পরবর্তী মতবিনিময় সভায় বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাড়ে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্ধী ছিল। দেড় সহস্রাধিক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল। রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, দুস্থ মানুষের আহাজারিতে মন ভেঙ্গে যায়। এত সামান্য বরাদ্দ দিয়ে বিশাল ক্ষয়ক্ষতি পূরণ সম্ভব না।
লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বেশি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে আমার ইউনিয়নে। ইউনিয়নের মেরাখোলা, আশ্রয়ণপ্রকল্প, বেগুনঝিরি, মেওলারচর, পাহাড় পাড়া, বৈল্যারচর গ্রাম গুলো উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়। ভাসিয়ে নিয়ে যায় সবকিছু। গ্রাম গুলোর অধিকাংশ ঘর মাটির তৈরি ছিল। কোন মাটির ঘর নেই, ৩শত মাটির ঘর ধসে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, এবারের বন্যায় উপজেলায় কমপক্ষে ৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার ৫শত পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছিল। এইপর্যন্ত ৩৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও নগদ ৯ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে রবিবার বান্দরবান জেলা প্রশাসক লামা উপজেলা পরিদর্শন করেছেন।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত