মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, বান্দরবান
নবাগত বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন জেলার লামা ও আলীকদম উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। স্মারণকালের সবচেয়ে বড় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দেখতে এসে তিনি দুই উপজেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন।
শনিবার (১২ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লামা উপজেলা পরিষদ হলরুমে লামা উপজেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতবিনিময় করেন। বিপর্যয় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে এবং নোট করেন। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে অবহিত করে তা বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করবেন বলে সভায় আশ্বস্ত করেন।
জনপ্রতিনিধিরা বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড সহ সাতটি ইউনিয়নের অধিকাংশ জায়গা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় এবং পাহাড় ধসের শিকার হয়েছে। শহরের বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতি হয়। লামা উপজেলায় এবারের বন্যার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধী ও সাড়ের তিন হাজার বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ভেঙ্গে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কৃষিখাতে ৯০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। এই দূর্যোগের সময় সরকারি ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, লামা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে ও পানিতে ডুবে ৩শত বসতবাড়ি নষ্ট হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাশ বলেন, পৌর শহরের ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের ব্যাংক ও এনজিও কর্তৃক প্রদত্ত ঋনের কিস্তি ৩ মাস স্থগিত করে সুদ মওকুফ করা সহ ব্যবসায়ীদের সহজ উপায়ে ঋণ দিয়ে ক্ষতি কেটে উঠার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ করেন। তিনি লামায় স্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করা দরকার বলে উল্লেখ করেন। রূপসীপাড়া চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, ইউনিয়নটি নদী ও তিনটি খালের প্রবলস্রোতের মুখে থাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। বন্যার ১ জনের মৃত্যু সহ এক হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সবজি, মাঠ ফসল ও জুম ফসল নষ্ট হয়েছে। সাধারণ চাষীদের সহযোগিতা করা দরকার।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন বলেন, ‘প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা সমন্বয় করে কাজ করলে দুর্যোগ মোকাবেলা সহজ হবে। তিনি বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পরিপূর্ণ তালিকা করতে বলেন। জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানদের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। সরকারি সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং আরো দেয়া হবে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্যা মোকাবেলায় আগামীতে এই অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর নব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেল্টা প্লান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৩৩ সালের মধ্যে নদীশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এরপর উজান থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি নামলেও নেমে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। এ প্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান।
সম্পূরক বক্তব্যে তিনি বলেন, বন্যায় লামার মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এই সময় তাদের নিজেদের চলতে কষ্ট হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এনজিও ও ঋণদান সকল প্রতিষ্ঠানকে আগামী তিন মাস ঋণের কিস্তি আদায় না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে বসার পরামর্শ দেন।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক লামা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। পরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লামা সরকারি হাসপাতাল, লামা থানা ও লামা খাদ্য গুদাম পরিদর্শন করেন। খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তিমির কুমার দে অবহিত করে বলেন, এবারের ভয়াবহ বন্যা লামা খাদ্য গুদামে প্রায় ১শত মেট্রিক টন চাল ও গম পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
লামা পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক আলীকদম উপজেলা পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি বন্যা কবলিত এলাকা দেখেন এবং আলীকদম উপজেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা করেন।
সম্পাদকঃ এম. শাহীন আলম।। প্রকাশকঃ উম্মে হাবিবা
যোগাযোগ: ০১৬৪৭-৬২৭৫২৬/ ০১৮২৩-৯১৯০৯৫ whatsapp
parbattakantho@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
পার্বত্য কন্ঠ © ২০১৮-২০২৪ সংরক্ষিত